ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না কেন?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফুটওভার ব্রিজ, অর্থাৎ পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি এক উঁচু সেতু। রাজধানীসহ দেশের নানা শহরে দেখা মেলে এই ব্রিজগুলোর, যা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগেই নির্মিত। কি..

ফুটওভার ব্রিজ, অর্থাৎ পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি এক উঁচু সেতু। রাজধানীসহ দেশের নানা শহরে দেখা মেলে এই ব্রিজগুলোর, যা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগেই নির্মিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—মানুষ কি এই ব্রিজগুলো ব্যবহার করছেন?

একজন বাবা, কাঁধে দুইটি স্কুলব্যাগ, দুই হাতে দুই সন্তানের হাত ধরে ব্যস্ত সড়ক পেরোচ্ছেন, মাথার ওপরেই ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও। এক মা কোলে শিশু, হাতে ব্যাগ—তিনিও নিচ দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন। এক যুবক বাজারের ব্যাগ হাতে, অন্য হাতে মোবাইল নিয়ে নিমগ্ন—সেও অবলীলায় উপেক্ষা করছে ফুটওভার ব্রিজ।

এটা কোনো ব্যতিক্রম দৃশ্য নয়, বরং প্রতিদিনের পরিচিত চিত্র। ফুটওভার ব্রিজ চোখের সামনেই থাকলেও যেন সেগুলো অদৃশ্য!


ফুটওভার ব্রিজ আছে, ব্যবহার নেই!

বর্তমানে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ১০০টির বেশি ফুটওভার ব্রিজ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিচ দিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বিষয়টি শুধু অনভ্যাস নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি ভয়ানক সামাজিক মানসিকতা

কেউ কেউ বলেন—“সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হয়”, “ভিড় থাকে”, “অন্ধকার ও চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় আছে”। আবার অনেকেই স্রেফ অলসতা বা অভ্যাসবশত এই সুরক্ষিত পথটি বেছে নেন না। অথচ, ব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি রাস্তায় নামা মানে নিজেকে ট্রাক, বাস, বাইকের নিচে ঠেলে দেওয়া।


ঝুঁকির পরিণতি: প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-র প্রতিবেদন বলছে, প্রতিদিন গড়ে ১৮-২০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন, যার একটা বড় অংশ পথচারী। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রায় ৩৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

পথচারীদের এমন অবাধ, বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে সড়কের মাঝখানে লোহার ব্যারিকেড বসানো হয়, ডিভাইডার উঁচু করা হয়। কিন্তু মানুষ তাও থামছে না—ফাঁকফোকর দিয়ে, ব্যারিকেড ডিঙিয়ে পার হচ্ছেন।


কে দায়ী? পথচারী, নাকি শহর ব্যবস্থাপনা?

এখানে পথচারীদের এককভাবে দায়ী করাও উচিত নয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায়—

  • ফুটওভার ব্রিজের প্রবেশপথ হকারদের দখলে।

  • ব্রিজে রয়েছে মল-মূত্রের দুর্গন্ধ, নোংরা পরিবেশ।

  • রাতে আলো থাকে না, ফলে চুরি বা যৌন হয়রানির ভয়।

  • প্রবীণ, শিশু বা প্রতিবন্ধীদের জন্য নেই কোনো র‍্যাম্প বা লিফট।

তাই মানুষ মনে করে, ব্রিজে উঠতে গেলে ঝুঁকি আরও বেশি।


সমাধান কী?

১. সচেতনতা বাড়ানো:
স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক আইন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব শেখানো উচিত। "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলনের মতো সামাজিক উদ্যোগকে সক্রিয় রাখতে হবে।

  1. ব্রিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা:
    প্রতিটি ব্রিজে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি ক্যামেরা, এবং নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা উচিত। হকার দখল ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  2. পরিকল্পিত অবকাঠামো:
    প্রবীণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য র‍্যাম্প, স্লোপ, এমনকি লিফট সংযুক্ত ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন।

  3. শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:
    ব্রিজ এড়িয়ে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ায় নির্ধারিত জরিমানা কিংবা সতর্কবার্তার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যেমনটি অনেক উন্নত দেশে প্রচলিত।


নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরই

আমরা অনেক সময় মনে করি, “একবার নিচ দিয়ে গেলে কী হবে?” কিন্তু ইতিহাস বলে, সেই একবারই কারও জীবনের শেষবার হয়ে যেতে পারে। মনে রাখা উচিত, জীবনের চেয়ে ২ মিনিটের শরীরচর্চা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

মাথার ওপরে যখন নিরাপদ ব্রিজ আছে, তখন নিচ দিয়ে যাওয়ার মানেই মৃত্যুকে আমন্ত্রণ। নিজের, সন্তানের ও সমাজের নিরাপত্তার জন্য—চলুন আমরা সবাই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি—নিরাপদে বাঁচি।

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator