খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত 'ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা নিয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, "জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা দেশকে নতুনভাবে পথ দেখিয়েছে। তাদের আবেগ ও মনের কথা আমাদের বুঝতে হবে।"
মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যে উঠে আসে, ১৬-১৭ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এমন অকুতোভয় তরুণ প্রজন্ম তৈরি হলো, তা এক চমকপ্রদ ব্যাপার। তিনি বলেন, "গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না, যা জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ-যুবকরা প্রমাণ করেছে।"
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান উল্লেখ করেন যে, একটি রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ নিজে নিজে তৈরি হয় না। "বিগত শাসনামলে ব্যবসায়ী, আমলা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করেছে," বলেন মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, "জুলাই আন্দোলনে অপেক্ষাকৃত তরুণ সাংবাদিকরা লড়াই করেছেন, অথচ অনেক সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন কিংবা সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছিলেন।"
মাহমুদুর রহমান বলেন, "জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেলেও পুরোপুরি মুক্ত হয়েছি কি না, তা প্রমাণিত হবে নির্বাচনের পর। নির্বাচিত সরকার যদি বিগত সরকারের পরিণতি দেখে শিক্ষা না নেয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ আবারও ফিরে আসবে।"
আলোচনা সভায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, "জুলাই আন্দোলন এমন এক ইতিহাস, যেখানে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশপ্রেমী ছাত্র-জনতা দেশের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।"
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, আইন স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শরিফ মোহাম্মদ খান, আমার দেশ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন এবং জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আয়মান আহাদ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আলকামা রমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জারিন প্রভা ও ইউআরপি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আকাশ। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান আরও উল্লেখ করেন, "ওয়ান ইলেভেনের সরকার ছিলো ভারতীয় আধিপত্যবাদের চক্রান্তের একটি ফসল। ২০০৮ সালে খুলনায় জিয়া হলে এক সেমিনারে আমি সর্বপ্রথম একথা বলেছিলাম। সেদিন অনেকে সন্দেহ পোষণ করলেও পরে প্রমাণিত হয় আমি সঠিক ছিলাম।"
তিনি বলেন, "২০১৮ সালে একদম ভুয়া মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অ্যারেস্ট করা হলো। সে সময় মির্জা ফখরুল সাহেবের উপস্থিতিতে এক মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম, আপনার নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন চাচ্ছেন- এটা ভুল। গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয় না। বিশ্বের কোথাও এর নজির নেই। আমার সেই কথা ২০২৪ সালে এ দেশের তরুণ সমাজ বুকের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছে।"