ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায় ফ্রান্স

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে অটল অবস্থান নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানালেন—ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে প্যারিস। সৌদি আরবের সঙ্গে আন্তর..

ফ্রান্সের বড় ঘোষণা: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে ম্যাক্রোঁ সরকার!

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের জটিল সমাধান ঘিরে নতুন মাত্রা যোগ করছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় জানিয়েছেন, তার সরকার এখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এমন সময়ে এই ঘোষণা এলো, যখন পশ্চিমা বিশ্বে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে তীব্র বিভাজন দেখা যাচ্ছে।

গত ২৮ মে, ইন্দোনেশিয়া সফরকালে এক সরকারি বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন,
“শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। ফ্রান্স সবসময় পক্ষপাতহীন অবস্থানে থেকেছে, এবং এই সংকটেও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সেই নীতির উপর ভিত্তি করে।”

তিনি আরও জানান, ফ্রান্স ও সৌদি আরব মিলে গাজা সংকট নিয়ে নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য—ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং একইসঙ্গে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপদ সীমান্ত নিশ্চিত করা।

ফ্রান্সের অবস্থান: ইউরোপের ভেতরে বিভাজন?

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—ফ্রান্স এই স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। গত ৯ এপ্রিল France 5-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে কাজ করছি এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এটি বাস্তবায়ন হতে পারে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের এই অবস্থান ইসরায়েলের জন্য কঠিন বার্তা হতে যাচ্ছে। এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ফ্রান্সের এই ঘোষণা পশ্চিমা জোটে ভিন্ন মত ও উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কী ঘটছে?

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে ১৪৫টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এই তালিকায় বড় বড় পশ্চিমা দেশগুলো এখনও অনুপস্থিত। ফ্রান্স যদি এই পথে এগোয়, তবে এটি হতে পারে একটি 'গেম-চেঞ্জার' পদক্ষেপ।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, গত এপ্রিলেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ প্রস্তাবের ওপর ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পশ্চিমা দেশের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ প্রকট আকার ধারণ করছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর, প্রথম ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেন। সেই সময় থেকেই বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

সম্মেলনের সম্ভাব্য প্রভাব

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে নিউইয়র্কে আয়োজিত হতে যাওয়া গাজা সংকটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন এই সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেলে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি শুধু কাগজে-কলমে নয়—বাস্তবিক অর্থেও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।


পশ্চিমা জোটে নতুন বিভাজনের শুরু?

ফ্রান্সের এই ঘোষণায় কূটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।

ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ফ্রান্স এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়—পশ্চিমা দুনিয়ার রাজনীতিতেও গভীর ছাপ ফেলবে।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator