close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

এনসিপির ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোগ: রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত

Shojol Ahmed avatar   
Shojol Ahmed
এনসিপি তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের তহবিল সংগ্রহের জন্য ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোগ শুরু করেছে, যা রাজনীতির অর্থায়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।..

বুধবার (৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর বাংলা মোটের দলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানান দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে দেশের আপামর জনতা এনসিপি বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে চেয়েছের। তার পরিপ্রেক্ষিতেই অনুদান গ্রহণের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
বিভিন্ন সময় যারা এনসিপির পাশে থাকতে চেয়েছেন, তাদের আর্থিক অনুদান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন আখতার বলেন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক আর্থিক পলিসি করতে চায় এনসিপি। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনের আয়, ব্যয়, বরাদ্দ, আয়ের উৎস, ব্যয়ের খাত প্রত্যেকটা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। 
গত আট মার্চ দলের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, আমরা অনলাইন ও অফলাইনে একটা ক্রাউডফান্ডিংয়ের (গণচাঁদা সংগ্রহ) দিকে যাচ্ছি, যে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা দলের কার্যালয় স্থাপনসহ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করবো।
ক্রাউডফান্ডিং কী
বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন কোনো ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করতে তহবিলের জন্য অল্প পরিমাণ করে অর্থ প্রদান করে, সেটাকে ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল বলা হয়। সাধারণত এই অর্থ ফেরত দিতে হয় না।
গণতহবিল মূলত স্টার্টআপ বা নতুন কোনো ব্যবসা উদ্যোগের জন্য বিকল্প তহবিলের জোগানের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মূলত ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
গণতহবিলের কয়েকটি ধরন রয়েছে। কখনো ঋণ–সুদসহ ফেরত পাওয়ার আশায় মানুষ কোনো একটা কোম্পানিকে টাকা ধার দেয়। এটা অনেকটা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী অনেক থাকে।
আবার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমেও অর্থ আদায় করা হয়। এটা শেয়ারবাজারের মতো হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়। আবার কোনো পুরস্কার বা সেবা পাওয়ার আশায়ও অর্থ প্রদান হয়। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই অনুদান হিসেবেও অর্থ দেওয়া হয়।
ফান্ডেবলডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট বলছে, ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রথম সফল ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালে। ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ম্যারিলিওন তাদের পুনর্মিলনী সফর আয়োজনের জন্য ভক্তদের কাছ থেকে অনলাইন অনুদান নিয়েছিল। তাদের এই পদ্ধতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, ২০০১ সালে আর্টিস্টশেয়ার নামের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে, যারা শিল্পীদের অ্যালবাম তৈরি করতে বা সফরে (ট্যুর) যেতে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়।
রাজনৈতিক গণতহবিল
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের গণতহবিল সংগ্রহের উদাহরণ রয়েছে।
দ্য হিন্দুতে গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের আম আদমি পার্টির নেত্রী ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা সদ্য সমাপ্ত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তার দলের প্রচারণার খরচ মেটাতে একটি গণতহবিলের প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তার নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য ৪০ লাখ রুপি দরকার ছিল।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার ৬৯ শতাংশ তহবিল ক্ষুদ্র দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইলেকটোলার কমিশন দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অর্থায়নের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা একটি স্বাধীন সংস্থা। তাদের ওয়েবসাইটে গণতহবিলের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গণতহবিলের সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে যে অর্থ কাকে দান করা হচ্ছে এবং কী জন্য দান করা হচ্ছে। অর্থাৎ তহবিলটি রাজনৈতিক দলের কাছে যাচ্ছে কি না, নাকি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয় মেটাতে নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টির সহযোগী অধ্যাপক সেনোরিটা দে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে গণতহবিল–সংক্রান্ত একটি লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক গণতহবিলের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান চাইতেন। এখন অবশ্য রাজনীতিবিদেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।

No comments found