রাজনীতি হলো দর-কষাকষির খেলা—এমন মন্তব্য করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে একীভূত হওয়ার বিষয়টি শুধু সাম্প্রতিক আলোচনা নয়, বরং এটি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তার মতে, এ ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা আসলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কারণ রাজনীতির মূলে রয়েছে দর-কষাকষি ও বার্গেইন।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। উপস্থাপক জানতে চান, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদ কি সত্যিই একীভূত হচ্ছে? উত্তরে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, "আমি যতদূর জানি, এই দুই দলের মধ্যে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এটি নতুন কোনো বিষয় নয়, আগে থেকেই এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।"
টকশো চলাকালীন এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। অনেকেই মনে করেন, এনসিপি জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির ঘরে ঢুকে যায়। এ বিষয়ে হাদি বলেন, "এক সময় শুনি এনসিপি জামায়াতের ঘরে ঢুকে গেছে, আবার কখনো শোনা যায় বিএনপির ঘরে ঢুকেছে। কিন্তু বাস্তবে এনসিপি কোনো ঘরেই পুরোপুরি যায় না। তারা দাঁড়িয়ে থাকে নিজেদের জায়গায়। আমার কাছে এটা এনসিপির গুড মুভ। এর মানে তারা দর-কষাকষি করতে চায়। পলিটিকস তো আসলে বার্গেইনের ব্যাপার।"
রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে নির্বাচনী আমেজ নেই বলেও মন্তব্য করেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। তিনি বলেন, "এখনও দেশে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়নি। সাধারণত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করে, তারা এলাকায় যায়, মানুষের সঙ্গে কথা বলে—তখনই আসল নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি বাস্তবে হয়নি।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শরিফ ওসমান হাদির এই বক্তব্য মূলত এনসিপির কৌশলগত অবস্থানকেই প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দর-কষাকষির বিষয়টি নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দল কোনো না কোনোভাবে সমঝোতা ও জোট রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে। এবারও হয়তো এনসিপি একই কৌশল অবলম্বন করছে।
এদিকে, রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, এনসিপি যদি গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা একটি নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। তবে অনেকেই মনে করেন, এই একীভূতকরণ টিকিয়ে রাখা সহজ হবে না, কারণ উভয় দলের নীতি, অবস্থান এবং নেতৃত্বের ধরণ ভিন্ন। তবুও, হাদির বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, তারা আপাতত দর-কষাকষির কৌশলেই এগোতে চাইছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দর-কষাকষি ও সমঝোতা এক অর্থে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করে। আর তাই শরিফ ওসমান হাদির বক্তব্য রাজনীতির একটি মৌলিক সত্যকেই সামনে নিয়ে এসেছে—রাজনীতি আসলেই বার্গেইনের খেলা।



















