close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

এনবিআরের কর্মসূচিতে আমদানি–রপ্তানি ব্যাহত, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচিতে থমকে গেছে দেশের আমদানি-রপ্তানি। কাঁচামালের ঘাটতিতে বন্ধ হচ্ছে কারখানা, বিলম্বে রপ্তানিতে বাতিল হচ্ছে অর্ডার—বিপর্যয়ে ব্যবসায়ীরা।..

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান শাটডাউন কর্মসূচি দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ভয়াবহ অচলাবস্থা তৈরি করেছে। সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপসহ অসংখ্য রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন হাজার হাজার কনটেইনার আটকে যাচ্ছে বন্দরে। ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে ডলারে, বন্ধ হতে বসেছে উৎপাদন, বাতিল হচ্ছে মূল্যবান ক্রয়াদেশ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০০ কনটেইনার কাঁচামাল আমদানি করে এবং ১৫০-১৭৫ কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করে। এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে এই কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল জানান, “আমদানি পণ্য ছাড় করতে না পারলে কাঁচামালের ঘাটতিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। গত শনিবার কাস্টমস বন্ধ থাকায় আমাদের ৮ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে শুধু পোর্টডেমারেজ বাবদ।”

এভাবে চলতে থাকলে, দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক গ্রুপটির কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

শনিবার সকাল ছয়টা থেকে ঢাকার এনবিআর ভবন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ সব কাস্টমস স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে শুল্কায়ন কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও সব রপ্তানি বন্ধ। প্রায় ১০০ টন শাকসবজি ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছেন রপ্তানিকারকেরা।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ জানান, পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, আর দামও পাচ্ছেন না চাষিরা। তিনি বলেন, এই সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়লে বিদেশি আমদানিকারকেরা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকবে। একবার হারালে ওই বাজার ফেরত পাওয়া কঠিন।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, কাস্টমসে শুল্কায়ন না হলে পণ্য জাহাজে তুলতেই দেরি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে রপ্তানি হলে বিদেশি ক্রেতারা মূল্যছাড় বা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, “আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৬০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বাধা পাচ্ছি। বড় প্রতিষ্ঠান হয়তো সামাল দেবে, কিন্তু ছোট কারখানাগুলো ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।”

কিছু জাহাজে কনটেইনার ওঠানামার অনুমোদন আগেই হওয়ায় সেগুলোর গতি রয়েছে, তবে নতুন আসা জাহাজের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে, অনেক জাহাজ নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্য না পেয়ে খালি ফিরে যেতে পারে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৪,৪৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১০.২০% বেশি। মে মাসেই রপ্তানি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৪৭৪ কোটি ডলারের পণ্য।
এই গতিশীল রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছে যদি কাস্টমস অচলাবস্থা অব্যাহত থাকে।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, এই অচলাবস্থা সহজেই এড়ানো যেত যদি সরকার ও এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে সময়মতো সংলাপ হতো। এখন আমরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছি।

এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের আন্দোলন নয়, এটি পুরো দেশের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিয়েছে। দিনে দিনে বেড়ে চলেছে ব্যবসায়ীদের লোকসান, থমকে যাচ্ছে উৎপাদন, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রপ্তানির গতি।
এই অবস্থায় সরকার, ব্যবসায়ী ও এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে।

Geen reacties gevonden