এনবিআর ভাঙবে, তবে এখনই নয়! সরকার সিদ্ধান্তে অটল, জানালেন অর্থ উপদেষ্টা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানালেন, এনবিআর পৃথককরণ সরকারের অপরিহার্য সিদ্ধান্ত, যা কোনোভাবেই বাতিল হবে না। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনই বাস্তবায়ন নয়। বিস্তারিত জানুন এই এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট..

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সেটি থেকে এক চুলও পিছু হটবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও কার্যকরতার জন্য অপরিহার্য। তবে প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এখনই এনবিআর ভাঙছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব
বাংলাদেশ সচিবালয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব তিনটি—সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, কিছু জরুরি সংস্কার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার।”

তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের ম্যান্ডেট দীর্ঘমেয়াদী নয়, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে—যেমন ব্যাংক, এনবিআর এবং পুলিশ প্রশাসনের মতো—সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া সম্ভব।”

প্রথম বাজেট, প্রথম বার্তা
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী ২ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এই বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য হবে—দায়িত্বশীল ব্যয়, কার্যকর রাজস্ব নীতি ও জনবান্ধব অর্থনীতি। বাজেট উপস্থাপন করবেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নির্বাচনের রোডম্যাপ স্পষ্ট হবে শিগগিরই
রাজনৈতিক অচলাবস্থা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাই একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতান্ত্রিক আচরণ করে, তবে তা সম্ভব।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুব শিগগিরই এই নিয়ে একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে।

বিক্ষোভ ও আন্দোলন—আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান
বর্তমানে নানা দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, তা নিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এসব দমন করা হতো, কিন্তু এখন আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। তবে দৈনন্দিন কাজের বিঘ্ন ঘটানো সমাধান নয়।”


এনবিআর বিভাজন: সময়ের দাবি, সংকল্পের প্রমাণ

সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও পিছু নয়
এনবিআর ভাঙার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “এই প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। রাজস্ব ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

বর্তমান পরিস্থিতি কী?
সরকার ‘রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে। তবে এখনই এনবিআর ভাঙার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এর পেছনে মূল কারণ হলো—সংগঠন কাঠামো, জনবল পুনর্বিন্যাস এবং প্রয়োজনীয় আইনি বিষয়গুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

রাজস্ব নীতি বিভাগ: কারা থাকবেন?
অর্থ উপদেষ্টা জানান, রাজস্ব নীতি বিভাগ হবে একটি ছোট অথচ অত্যন্ত দক্ষ ইউনিট। এখানে থাকবেন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ এবং নীতিগত বিশ্লেষকরা, যারা দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাস্তবসম্মত নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করবেন।


সংস্কারের পথে বাধা কোথায়?

জটিলতা ও কর্মীদের উদ্বেগ
এনবিআর বিভাজন নিয়ে দেশব্যাপী কর্মকর্তারা আপত্তি জানাচ্ছেন। তাদের আশ্বস্ত করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “কোনো কর্মীর প্রতি অবিচার হবে না। সব সিদ্ধান্ত আলোচনা করে, ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।”

আইএমএফের চাপ নয়, সরকারের নিজস্ব উপলব্ধি
অনেকে মনে করছেন এনবিআর বিভাজন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা শুধুমাত্র আইএমএফ নয়, সরকারের নিজস্ব উপলব্ধিও এই সংস্কারের অন্যতম ভিত্তি। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক শুধু পরামর্শ দিয়েছে, চাপ সৃষ্টি করেনি।”

২০০৮ সালেই সূচনা হয়েছিল উদ্যোগের
ড. সালেহউদ্দিন আরও জানান, এই এনবিআর বিভাজনের উদ্যোগ ২০০৮ সালেই নেওয়া হয়েছিল, যা কার্যকর হতে ১৭ বছর সময় লেগেছে। ইতোমধ্যে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে।


কী থাকছে সামনের দিনে?

অধিকার সুরক্ষা, আলোচনা ও ন্যায়বিচার
সরকার বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে।

নিয়মকানুন আসছে ধাপে ধাপে
বর্তমানে অধ্যাদেশে বিস্তারিত কাঠামো না থাকলেও, অর্গানোগ্রাম, জনবল ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হলো একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক রূপরেখা উপস্থাপন। এনবিআর বিভাজনের মতো সাহসী পদক্ষেপ এই সরকারের নীতিগত দৃঢ়তারই প্রতিফলন।
অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী—“আমরা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছি। এই রূপান্তর সময়ের দাবি, সরকারের অঙ্গীকার।”

Nessun commento trovato