close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

এক নজরে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সংসদ ছাড়াই ইতিহাসের দ্বিতীয়বার বাজেট পেশ হচ্ছে আজ। অধ্যাপক ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি দেশের ৫৪তম বাজেট। বাজেট ছোট হচ্ছে, কমছে খরচ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে আসছে নতুন ..

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের ৫৪তম জাতীয় বাজেট আজ পেশ হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রেক্ষাপটে। নির্বাচিত সংসদ না থাকায় এ বছর বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে ভিন্নধর্মী কাঠামোয়। বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন।

এই বাজেট শুধু পরিমাণে নয়, কাঠামোতেও ব্যতিক্রম। এটি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথম বাজেট। সংসদীয় বিতর্ক ও পাসের প্রথাগত প্রক্রিয়া না থাকায়, এই বাজেট উপস্থাপন কার্যত একটি নীতিনির্ধারক ঘোষণায় পরিণত হয়েছে, যার ওপর জনমত আহ্বান করে পরে অনুমোদন নেওয়া হবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেট হবে আগের বছরের তুলনায় কম। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। সরকার মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরাতে ব্যয়ের রাশ টানছে।

এই বাজেট পেশের ধরনটি অনেকটা ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার বাজেট ঘোষণার পুনরাবৃত্তি। সে সময়ও সংসদ না থাকায় বাজেট পেশ করা হয়েছিল টেলিভিশনে। ২০০৮ সালের ৯ জুন, অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। সেদিনও ছিল সোমবার, এবং বেলা ৩টায় বাজেট বক্তব্য সম্প্রচার করা হয়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে।

এবারের বাজেট পেশের পর, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নাগরিকদের মতামত আহ্বান করা হবে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে বাজেট চূড়ান্ত করে আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

এক নজরে বাজেট ইতিহাস: ৫৩ বছরের পথচলা

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ৫০১ কোটি টাকা। সেই সূচনা থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজেট শুধু আকারে নয়, দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেকবার পরিবর্তন হয়েছে।

এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাজেট উপস্থাপন করেছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যিনি টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেন। তার পরে আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার বাজেট পেশ করেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বশেষ বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান বাজেট কিছুটা সংকুচিত হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ধরে রাখাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

সংসদবিহীন বাজেট পেশের প্রভাব

সংসদ না থাকায় এবার সংসদীয় বিতর্ক ও সংশোধনের সুযোগ থাকছে না। এটি গণতান্ত্রিক বাজেট প্রক্রিয়ার একটি বড় পরিবর্তন। তবে সরকারের ভাষ্য, নাগরিক মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যা একধরনের বিকল্প গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে সজাগ এবং তিনি ইতোমধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই বাজেট তার অভিজ্ঞতারও প্রতিফলন বহন করবে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


 

অর্থনৈতিক সংকোচন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নাগরিক প্রত্যাশার ভার—সবকিছুর মধ্যেই আজ পেশ হচ্ছে বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট। এটি শুধু অর্থের হিসাব-নিকাশ নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখন দেখার বিষয়, সংসদবিহীন এই বাজেট কীভাবে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করে এবং কার্যকর নীতিতে রূপ নেয়।

没有找到评论