আল্লাহর ঘরে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো অলৌকিকভাবে—দুইবার ফিরে আসা বিমানে শেষমেশ উঠলেন আমের মাহদি!
পবিত্র হজ পালন করতে চাওয়া লাখো মুসলমানের মতোই, লিবিয়ার তরুণ আমের মাহদি মনসুরের হৃদয়েও দীর্ঘদিন ধরে ছিল আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ তাওয়াফ করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। চলতি বছর সেই স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় পৌঁছেও বাধার মুখে পড়েন তিনি। হজের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা, নিবন্ধন, টিকিট—সব সম্পন্ন করে প্রস্তুত হয়েই মিশরের বিমানবন্দরে হাজির হন তিনি। উদ্দেশ্য—সৌদি আরব।
কিন্তু সেখানেই ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ‘নিরাপত্তা ইস্যুর’ কথা বলে আমেরকে ফ্লাইটে উঠতে দেননি। বিমানের সব যাত্রী উঠে গেলেও বিমানের দরজা বন্ধ হলো না আমেরের জন্য। তিনি কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “আমি হজের নিয়ত করেছি। আমি যাবই যাব। আমার গন্তব্য কাবা।”
প্রথমবারের মতো ফ্লাইট ছাড়ে—তবে আমেরকে ফেলে রেখে।
এখানেই যদি শেষ হতো গল্প, তাহলে হয়তো সেটি হত শুধুই আরেকটি হতাশার গল্প। কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয় এক বিস্ময়কর মোড়। বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি বাধ্য হয়ে ফিরে আসে বিমানবন্দরে। সুযোগ পেয়েও আমেরকে তখনও বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি।
আবারও উড্ডয়নের চেষ্টা, আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি—দ্বিতীয়বার ফিরে আসে ফ্লাইট।
সেখানেই ঘটে আরও বড় বিস্ময়। বিমানটি পুনরায় প্রস্তুত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার যখন উড্ডয়ন করতে যায়, ঠিক তখনই ফের একটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসে সেই ফ্লাইট। এ যেন শুধু মেশিন নয়, কোনো অদৃশ্য হাত রুখে দিচ্ছে বিমানের যাত্রা—যতক্ষণ না আমের উঠছেন তাতে।
পাইলটের ঘোষণা: "এই যাত্রী ছাড়া আমি সৌদি যাব না"
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিমানের পাইলট নিজেই এক অদ্ভুত ঘোষণা দেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, "এই যুবক, যাকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি, তার প্রতি আল্লাহর কুদরত হয়তো এই বারবার ফিরে আসার পেছনে কাজ করছে। আমি এই যাত্রী ছাড়া এই ফ্লাইট পরিচালনা করবো না।" পাইলটের এমন সাহসী এবং মানবিক ঘোষণায় চমকে যান উপস্থিত সবাই।
অবশেষে বিমানে উঠলেন আমের, চোখে অশ্রু, মুখে কেবল আল্লাহর নাম।
বিমানে উঠেই আমের সেজদায় পড়ে যান। ফ্লাইট সৌদি পৌঁছালে, মক্কায় গিয়ে তিনি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমার আনন্দ ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। আমি শুধু বলতে পারি, আল্লাহ তাঁর কুদরত দেখিয়েছেন। আমি কাবার সামনে দাঁড়ানো—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল আমেরের হজযাত্রা—লাখো মুসলমানের চোখে পানি
আমেরের এই অবিশ্বাস্য হজযাত্রার গল্প ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হাজারো মুসলিম তার ভিডিও শেয়ার করছেন এবং বলছেন—“যে হৃদয়ে হজের নিয়ত থাকে, তাকে কেউ থামাতে পারে না।” অনেকে পাইলটের প্রশংসা করে বলেন, “এমন মানবিক সাহসিকতা আমাদের বিমানে বিরল, তিনি শুধু একজন পাইলট নন, তিনি একজন সত্যিকারের মুমিন।”
আমের মাহদি মনসুরের গল্প শুধু এক হজযাত্রীর অভিজ্ঞতা নয়, বরং এটা ঈমান, সংকল্প ও আল্লাহর কুদরতের জীবন্ত প্রমাণ। প্রমাণিত হলো, আল্লাহর ঘর যাদের জন্য ডাক দেয়, তাদের পথে যত বাধাই থাকুক, কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারে না।