ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় আবারও কেঁপে উঠেছে দক্ষিণ লেবানন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে ইসরায়েলি সেনারা আলি আল-তাহের এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যা ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আরেকটি বড় লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আল মায়াদিনের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো বনাঞ্চল আগুনে পুড়ে যেতে থাকে এবং আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার ফলে দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। যুদ্ধবিরতির পর থেকেই ইসরায়েল বারবার এই একই অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
একই দিনে, সীমান্তবর্তী আল-নাকুরা উপকূলে একটি এফপিভি ড্রোন থেকে সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইসরায়েলি বাহিনী। কাছাকাছি অবস্থানরত এক জেলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান ও ড্রোন হামলায় শত শত সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। নভেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হওয়া এসব আগ্রাসী হামলা এখন লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয় ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করেছে।
এর আগের দিন, ২ অক্টোবর, দক্ষিণ লেবাননের জেজিন জেলার আল-জারমাক এলাকায় এবং মারজিউনের আল-খারদালি সংলগ্ন স্থানে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একটি বেসামরিক গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এই হামলায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হন বলে নিশ্চিত করেছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত ব্যক্তিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের এই আগ্রাসী মনোভাব শুধু সীমান্ত অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট করছে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা মনে করছেন, যদি এই ধরণের হামলা অব্যাহত থাকে, তবে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘর্ষ আবারও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
বর্তমানে দক্ষিণ লেবাননের মানুষ এক অনিশ্চিত ও ভয়ের পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন। শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং অবিলম্বে এসব আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের লাগাতার হামলা শুধু দক্ষিণ লেবানন নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় পদক্ষেপ ছাড়া এই সহিংসতা থামানো কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকদের মত। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে এবং যেকোনো সময় নতুন করে বড় আকারের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।



















