বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য-বিদায়ী সভাপতি ফারুক আহমেদকে দুর্নীতির কারণে নয়, বরং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শনিবার (৩১ মে) জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা স্পষ্ট করেন—বিসিবির নেতৃত্বে যে পরিবর্তন এসেছে, তার পেছনে রয়েছে ‘পারফরমেন্স ঘাটতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা’।
তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমরা বিসিবিতে নতুন নেতৃত্বের অধীনে প্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন দেখিনি। বরং ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর থেকেই ধারাবাহিক ব্যর্থতা শুরু হয়। পারফরমেন্সের এই অবনতিই বড় কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের পরামর্শে আমরা ফারুক আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম, বাস্তবে তার কর্মকাণ্ডে আমরা সেই নেতৃত্বের ছাপ পাইনি। বিপিএলের অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা এবং বাজে ব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত আটজন পরিচালক আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন।”
বিসিবি সভাপতির পদে এলো বড় পরিবর্তন: বুলবুল এখন নতুন কর্ণধার
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় বিসিবি সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদকে বসানো হয়। কিন্ত মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে সেই আস্থার জায়গা হারান তিনি।
ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) তাদের এখতিয়ার অনুযায়ী ফারুক আহমেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে এবং তার জায়গায় নতুন করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিসিবির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, একাধিক পরিচালকের চাপে এবং ক্রিকেটের ক্রমাগত ব্যর্থতার চিত্র বিশ্লেষণ করে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অপসারণের নেপথ্যে কী ছিল?
বিসিবি থেকে ফারুক আহমেদের অপসারণ নিয়ে শুরু থেকেই গুঞ্জন ছিল। তবে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, এর পেছনে হয়তো দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যে সেই জল্পনার অবসান হলো।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “ফারুক আহমেদকে নিয়ে কোনো দুর্নীতির তদন্ত হয়নি বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু দায়িত্ব পালনে তাঁর ঘাটতি ছিল প্রকট। বড় পদে বসার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তাঁর মধ্যে আমরা পাইনি।”
তিনি যোগ করেন, “যে প্রত্যাশা নিয়ে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সেই প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বিপিএলের সময় অনিয়ম, নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্তহীনতা ও ব্যর্থ টিম ম্যানেজমেন্ট—সব কিছুই তার বিরুদ্ধে গেছে।”
সামনে কী অপেক্ষা করছে বিসিবির জন্য?
বিসিবিতে নতুন সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল দায়িত্ব নেওয়ায় অনেকেই আশা করছেন, আবারও একটা পেশাদার নেতৃত্ব ফিরে আসবে। একজন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন খেলোয়াড় হিসেবে বুলবুলের নেতৃত্বে টিম ম্যানেজমেন্ট, হাই পারফরমেন্স ইউনিট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার শীর্ষ পদে এই পরিবর্তন দেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতের জন্য বড় বার্তা হতে পারে। নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ দল যেভাবে পারফর্ম করছে, সেটি নিয়েও ভবিষ্যতে জবাবদিহিতার একটি ধারা চালু হওয়ার আভাস দিচ্ছে নতুন ক্রীড়া প্রশাসন।



















