close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
বাংলাদেশের শিল্পখাত একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে। উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে না পারা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, জ্বালানি সমস্যা, এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপ। এসব সংকট শুধু শিল্পখাত নয়, অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ডলার সংকট এবং উৎপাদন ব্যাহত
বর্তমানে ডলারের আনুষ্ঠানিক মূল্য ১২০ টাকা, যেখানে ২০২২ সালের মে মাসে ছিল মাত্র ৮৬ টাকা। এ হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কাঁচামাল আমদানিতে এলসি করতে না পারা এবং জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক কারখানা আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ। উদাহরণস্বরূপ, থার্মেক্স গ্রুপের ১৭টি কারখানার মধ্যে ১০টি চলছে মাত্র ৩০ শতাংশ সক্ষমতায় এবং সাতটি ৬০ শতাংশে।
শ্রমিক অসন্তোষে বন্ধ কারখানা
শ্রমিক অসন্তোষ এবং বেতন নিয়ে অসন্তুষ্টির ফলে তৈরি পোশাক খাতের অন্তত ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে লাখো কর্মীর জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও হ্রাস পাচ্ছে।
বড় শিল্পগ্রুপগুলোর সংগ্রাম
নোমান গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ এবং ফকির ফ্যাশনের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও তীব্র সংকটে রয়েছে।
নোমান গ্রুপ: ৮০ হাজার শ্রমিক এবং বার্ষিক ১.৩ বিলিয়ন ডলার টার্নওভার থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় ভুগছে। তারা সরকারকে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে।
ফকির ফ্যাশন লিমিটেড: রূপগঞ্জের এ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি আয় নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও রাজনৈতিক চক্রান্ত ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে।
সুদের হার এবং খেলাপি ঋণ
ব্যাংকঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। খেলাপি ঋণের নীতিমালার কঠোর পরিবর্তনে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিপাকে পড়ছেন।
জ্বালানি সংকটের প্রভাব
গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে অনেক কারখানা আংশিক উৎপাদনে রয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানিয়েছে, গ্যাস সংকটের কারণে টেক্সটাইল খাতের কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে।
নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন
এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ নেতারা সংকট মোকাবিলায় দ্রুত নীতিগত পরিবর্তন, আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন এবং ব্যাংকঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।
শেষ কথা
বাংলাদেশের শিল্পখাত এখন ইতিহাসের এক সংকটময় সময়ে অবস্থান করছে। এ সংকট কাটাতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। নইলে শুধু শিল্পখাত নয়, পুরো অর্থনীতিই দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली