তনু, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে টিউশনি শেষে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু ওই রাতেই তার খুন হওয়া মরদেহ পাওয়া যায় একটি জঙ্গলে। এরপর শুরু হয় তদন্ত, তবে এখনও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি।
গত ৯ বছরে তনু হত্যার মামলা বিভিন্ন পর্যায়ে গড়িয়েছে। সর্বশেষ, পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) মামলার তদন্ত করছে, কিন্তু তাও কোনো সঠিক ফলাফল আসেনি। মামলার গত কয়েক বছরে তনুর পরিবার অভিযোগ করেছে যে তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এবং মামলার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। তনুর বাবা, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন, হতাশ হয়ে বলেন, "এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তারা চায়নি এ মামলার বিচার হোক। এখন আমরা ড. ইউনূস সরকারের কাছে বিচার চাই।"
তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "তনুকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ৯ বছর যারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। তারা মামলা নষ্ট করেছে।"
তনুর হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ও পিবিআই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু কখনও সন্দেহভাজনদের যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তনুর পরিবারের দাবী, গরিব হওয়ায় তাদের মামলা গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং বিচার পেতে তারা হেরে যাচ্ছেন।
এদিকে, মামলার তদন্তের মধ্যে নানা দিক থেকে জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এমনকি, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয় এবং নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন পিবিআই পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।
তনুর পরিবার এবারও বিচারের আশা ছেড়ে দিতে চান না, তবে নতুন সরকারের নেতৃত্বে তাদের একটু আশার আলো দেখছে। তনুর মা-বাবা জানিয়েছেন, নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তারা তনুর জন্য মসজিদে দোয়া এবং এতিম শিশুদের জন্য ইফতার আয়োজন করবেন।
তনু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকায়, এটি শুধু তনু পরিবারকেই নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: কীভাবে একটি মামলার সঠিক বিচার সম্পন্ন করা হয়?