বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী দিনের আধুনিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে লিঙ্গভিত্তিক সমতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি দিবস (১৭ মে) উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এক বাণীতে বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে প্রেরণা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিজিটাল রূপান্তরে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।”
ড. ইউনূস আরও জানান, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সেবায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো না হলে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ অসম্ভব। “ডিজিটাল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আমাদের আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের পূর্বশর্ত,” তিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ যাতে সরকারি সেবা দ্রুত এবং সহজে পেতে পারে, সেজন্য ‘নাগরিক সেবা’ নামক ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এই সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।”
ড. ইউনূসের বক্তব্যে উঠে এসেছে নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগের কথাও। তিনি বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা তাদের ডিজিটাল অর্থনীতিতে প্রবেশের সুযোগ বাড়াবে। তদ্রূপ, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শি-এসটিইএম (STEM) ট্রেনিং চালু করা হয়েছে, যা তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষায় সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।”
তাছাড়া, দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের স্যাটেলাইটভিত্তিক উচ্চগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক চালু করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন। এটি দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোয় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং জাতির ডিজিটাল উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রগতিশীল এবং সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করে সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করবো।”
সরকারের এই ডিজিটাল পরিকল্পনা শুধু শহর নয়, গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, যেখানে নারীরাও স্বপ্ন পূরণের সমান অধিকার পাবে। ড. ইউনূসের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সমতা কেবল উন্নয়ন নয়, এটি দেশের সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
অতীতের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে।
পরিশেষে প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর জাতি হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যেখানে নারী-পুরুষ সকলেই সমান অংশীদার।