close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ডিএসসিসি’র মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের গেজেট থাকলেও মেয়াদ শেষ, শপথ হয়নি এখনও..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বৈধ মেয়র ঘোষণা পেয়েও এখনও শপথ নিতে পারেননি বিএনপির ইশরাক হোসেন। তাপসের মেয়াদ শেষ, কিন্তু দক্ষিণ সিটিতে এখন নেতৃত্বশূন্য অচলাবস্থা। প্রশাসনিক অনিশ্চয়তায় ডিএসসিসি।..

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নেতৃত্বে সৃষ্টি হয়েছে অনন্য এক প্রশাসনিক জটিলতা।
পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে বিদায়ী মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সময়কাল শেষ হয়েছে ১ জুন ২০২৫ তারিখে। অথচ, গেজেট অনুসারে বৈধ মেয়র বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন হলেও এখনও পর্যন্ত তিনি শপথ গ্রহণ করতে পারেননি। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশন কার্যত রয়েছে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায়।

২০১৫ সালের নির্বাচন বাতিলের দাবি করে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, ভোট গ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। মামলা চলাকালে প্রায় চার বছর পার হয়ে গেলেও, অবশেষে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দেয়।

রায়ে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রকৃত বিজয়ী ইশরাক হোসেনই বৈধ মেয়র। আদালত একইসঙ্গে ২ ফেব্রুয়ারির পুরনো গেজেট বাতিল করে নতুন গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়। সেই অনুসারে, নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে শেখ ফজলে নূর তাপসের পরিবর্তে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—গেজেট প্রকাশের এক মাস পরেও কেন শপথ হয়নি?

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হামিদ খান জানান, আদালত থেকে এখনও কোনো সরাসরি নির্দেশনা কিংবা নথিপত্র তারা হাতে পাননি। তার ভাষায়, “শুধু গেজেট নয়, আদালতের মূল আদেশ আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আসতে হবে। সেই পর্যন্ত কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।”

অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও এখন পর্যন্ত কোনো শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। এমনকি কোনো ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি বলে সূত্রে জানা গেছে।

আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ গ্রহণ একটি আবশ্যিক প্রক্রিয়া। এটি ছাড়া মেয়র কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না। তাই আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট থাকা সত্ত্বেও, শপথ না হওয়ায় ইশরাক হোসেন কার্যত দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে একজন প্রশাসনিক বিশ্লেষক বলেন, “এটি একটি গভীর প্রশাসনিক সংকটের ইঙ্গিত। আদালতের রায় এবং গেজেটকে কার্যকর করতে সরকার যদি রাজনৈতিক কারণে বিলম্ব করে, তাহলে তা আইনের শাসনের পরিপন্থী। একইসাথে ডিএসসিসির দৈনন্দিন কাজকর্মও অনিশ্চয়তায় পড়ছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, পাঁচ বছর পূর্ণ করে তাপসের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সিটি করপোরেশনের নীতিগত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প, বাজেট অনুমোদন, জনসেবামূলক সিদ্ধান্ত—সবকিছুই মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে বাধা দিচ্ছে। তাদের দাবি, নির্বাচনী রায়কে সম্মান না করে বর্তমান সরকার আদালতের অবমাননা করছে।

সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, বোর্ডের প্রথম সভা থেকে মেয়রের সময়কাল শুরু হয়। সে হিসেবে ২০২০ সালের ২ জুন থেকে গণনা শুরু হলে, ২০২৫ সালের ১ জুনই মেয়াদ শেষ হয়। এই নিয়ম মেনে হিসাব করলে, মেয়রের চেয়ারে এখন থাকা উচিত ইশরাক হোসেনের। অথচ, প্রশাসনিক এবং আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতায় তার শপথ গ্রহণ এখনও ঝুলে রয়েছে।

 গেজেট থাকা সত্ত্বেও শপথ না হওয়া, মেয়াদ শেষ হলেও নতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ না করা—সব মিলিয়ে ডিএসসিসিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্বাভাবিক ও নজিরবিহীন প্রশাসনিক শূন্যতা। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত এই জট খুলবে এবং ইশরাক হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের চেয়ারে বসতে পারবেন কি না।

No comments found


News Card Generator