অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমের সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা প্রসঙ্গে একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তার মতে, ধানমন্ডি ৩২-এর সঙ্গে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
শফিকুল আলম তার বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, "হাসিনা তার বাবাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল যে তার বাবাকে একটা মনস্টার বানিয়ে রেখেছিল। ফলে মানুষের সমস্ত রাগ যেয়ে পড়েছে তার বাবার ওপরে।" তিনি স্বীকার করেন যে, ধানমন্ডি ৩২ অনেকের কাছে শেখ মুজিবের একটি বাড়ি এবং অনেকের স্মৃতির সঙ্গে এটি জড়িত। তবে একই সাথে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "কিন্তু ওইটার সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক দেখি না।" তার এই বক্তব্য স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস ও স্মৃতিস্তম্ভের তাৎপর্য নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নিজের দলের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে প্রেসসচিব বলেন, "আমরা প্যারেড করলেই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী হয়ে গেলাম?" তিনি প্রশ্ন তোলেন, "মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী নাকি? মানুষকে তার ডেমোক্রেসিকে ফিরিয়ে দেওয়া কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী?" তার মতে, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল লক্ষ্য। তিনি দাবি করেন, দেশের নাগরিকেরা যেখানে গর্বের সাথে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে, সেটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
দেশের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের পরিস্থিতি নিয়ে শফিকুল আলম মন্তব্য করেন, "দেশে ৫৪ বছর ধরে কোর্টগুলোকে ল মিনিস্ট্রি কবজায় রেখেছে। সেটাকে আমরা সরিয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্স দিচ্ছি। এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী নাকি?" তার এই বক্তব্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের সরকারের পদক্ষেপকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "ওনারা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আসছিলেন, ওনার বাপ-মা, খালা-খালু দিয়ে।" তিনি ৮৮৮টি স্থাপনা, যেমন স্কুল-কলেজ, ব্রিজ, ইত্যাদিতে শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম দেওয়ার প্রবণতাকে 'কিংডম'-এর সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেন, "আমরা কি একটা কিংডমের বাসিন্দা? ওনাদের রাজত্বে আমাদের তখন মাথা নত। আমরা প্রজা হিসেবে ছিলাম।" তার এই বক্তব্য প্রকারান্তরে পূর্ববর্তী শাসন আমলে শেখ পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একচ্ছত্র আধিপত্যের সমালোচনা হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।



















