ঢালিউডের নায়িকাদের পারিশ্রমিক: তারকাখ্যাতির উত্থান-পতন

Abdulmalek avatar   
Abdulmalek
পরীমনি: ঢালিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকা
ভারতের সিনেমায় কাজ ও পারিশ্রমিকের নতুন রেকর্ড
ঢালিউডের নায়িকাদের সম্মানী: বৈষম্য ও বাস্তবতা
ঢালিউডে নায়িকাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির কারণ
ঢালিউডে নায়..

বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি সাধারণ দর্শকদের আগ্রহ সবসময়ই তুঙ্গে থাকে। বিশেষ করে ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকারা কে কত পারিশ্রমিক নেন, তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। চলচ্চিত্র তারকাদের আয়-উপার্জন ও জনপ্রিয়তা সাধারণ ভক্তদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় এক আলোচনার বিষয়। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির নায়িকাদের পারিশ্রমিক নিয়ে খোঁজ নিলে দেখা যায়, কারও পারিশ্রমিক ৩ লাখ থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে থাকলেও কেউ কেউ সিনেমাপ্রতি নিচ্ছেন ২২ থেকে ২৮ লাখ টাকা পর্যন্ত।

তবে ঢালিউডের পুরোনো ও নতুন নায়িকাদের সম্মানীতে এক ধরনের বৈষম্যও লক্ষ করা যায়। নতুনদের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক তুলনামূলক কম হলেও কিছু সিনিয়র নায়িকাদের সম্মানী সময়ের সঙ্গে ওঠানামা করছে। কেউ তিন লাখ টাকা দিয়ে শুরু করে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সেটা ২৮ লাখ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন, আবার কেউ একসময় ১৫-২০ লাখ টাকা পেলেও বর্তমানে তাদের পারিশ্রমিক হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমানে ঢালিউডে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকাদের একজন পরীমনি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা ও পারিশ্রমিক দুই-ই বাড়িয়েছেন। অভিনয়জীবনের শুরুটা হয়েছিল ছোট পর্দা দিয়ে, ইদ্রিস হায়দারের পরিচালিত ‘সেকেন্ড ইনিংস’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন। এ নাটকের জন্য তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ২৬ হাজার টাকা।

এরপর সিনেমায় তার অভিষেক ঘটে শাহ আলম মণ্ডলের ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবির মাধ্যমে। এই সিনেমার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো ৩ লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন, পাশাপাশি কস্টিউম বাবদ আরও ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।

সময়ের সঙ্গে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে সিনেমার পারিশ্রমিকও বাড়ে। ‘অ্যাডভেঞ্চার সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে তিনি সর্বোচ্চ ২২ লাখ টাকা সম্মানী নিয়েছিলেন, যা ঢালিউডের একজন নায়িকার জন্য রেকর্ড। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ পরিচালকের সিনেমায় কম পারিশ্রমিকেও কাজ করেছেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, কলকাতার সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন পরীমনি। মাতৃত্বকালীন বিরতির পর তিনি অভিনয়ে ফেরেন দেবরাজ সিনহার ‘ফেলুবক্সী’ ছবির মাধ্যমে। এতে তার নায়ক ছিলেন কলকাতার অভিনেতা সোহম। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ২৮ লাখ টাকা সম্মানী নেন, যা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

এছাড়া ঢালিউডের আরেকটি আলোচিত সিনেমা ‘গোলাপ’-এ চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পরীমনি, যেখানে তার নায়ক নিরব।

ঢালিউডের নায়িকাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণে এক ধরনের অসমতা দেখা যায়। যেখানে নতুন নায়িকাদের মধ্যে কেউ কেউ মাত্র ৩ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন, দীর্ঘদিন কাজ করেও অনেক নায়িকা ৫-৭ লাখ টাকার বেশি সম্মানী পাচ্ছেন না। আবার কিছু প্রতিষ্ঠিত নায়িকা ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার পরও সম্মানীর দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছেন।

এছাড়া ঢালিউডে সিনেমার বাজেটের সংকট, ব্যবসায়িক মন্দা, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রসার এবং হল সংকটের কারণে অনেক নায়িকার সম্মানী আগের তুলনায় কমে গেছে। আগে যারা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখন ৮ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে সম্মানী নিচ্ছেন।

১. জনপ্রিয়তা ও তারকাখ্যাতি: যেসব নায়িকা দর্শকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় ও বক্স অফিসে সাফল্য আনতে পারেন, তারা সাধারণত বেশি পারিশ্রমিক পান।
২. সিনেমার বাজেট: বড় বাজেটের সিনেমায় নায়িকাদের সম্মানী তুলনামূলক বেশি হয়।
3. কলকাতার সিনেমায় কাজের সুযোগ: যেসব নায়িকা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের বাজারেও পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের পারিশ্রমিক বাড়তে দেখা গেছে।
৪. ব্র্যান্ড ভ্যালু ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব: সামাজিক মাধ্যমে বেশি সক্রিয় তারকাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে, যা তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে ঢালিউডের পরিস্থিতি পরিবর্তনের পথে। নতুন প্রজন্মের নায়িকারা আসছেন, তবে সিনিয়রদের জনপ্রিয়তা ও পারিশ্রমিকের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হচ্ছে।

একসময় যেসব নায়িকা ১৫-২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখন সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে, পরীমনির মতো কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পেরেছেন এবং পারিশ্রমিক বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে ঢালিউডে তারকাদের আয়-উপার্জনের চিত্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সামনের দিনগুলোতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রসার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সিনেমার প্রবেশ কেমন হয়, তার ওপরই নির্ভর করবে নায়িকাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

Tidak ada komentar yang ditemukan