বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাগরিকরা উচ্চ মাত্রায় আশাবাদী হলেও, দুর্নীতির লাগামহীন বিস্তারকে দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে এই মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, যেখানে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সেখানে দেশের এক-পঞ্চমাংশ (২১ শতাংশ) নাগরিক সরাসরি দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করেন।
আইআরআইয়ের সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আটটি বিভাগে এই 'ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ' পরিচালনা করে। প্রকাশিত ফলাফলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যায়ন বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।
জরিপ অনুযায়ী, মোট অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, যার মূল কারণ হিসেবে তারা অর্থনৈতিক অগ্রগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে চিহ্নিত করেছেন। তবে ৪২ শতাংশ নাগরিক ভিন্নমত পোষণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্যকেই ভুল পথে চলার প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে এই উদ্বেগের মাঝেও আশাবাদ বিদ্যমান।
রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ১৮ শতাংশ নাগরিক বড় সমস্যা হিসেবে দেখলেও, দুর্নীতিই যে অধিকাংশ মানুষের কাছে প্রধান মাথাব্যথার কারণ, তা জরিপে স্পষ্ট। বিশেষ করে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন, যা নাগরিক জীবনে দুর্নীতির গভীরতা প্রমাণ করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অভাবকেই দায়ী করেছেন। তিনি মন্তব্য করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত না করলে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দমনে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। অন্যদিকে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৮ শতাংশ মানুষ আগামী এক বছরে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে বলে আশাবাদী। ৭২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের যুবক ও তরুণদের একটি অংশ দেশ ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করাটা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম মনে করেন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব এবং দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার বিষয়ে বর্তমান সরকারকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণ সহজ না হলেও অন্তর্বর্তী সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে বলে তিনি মনে করেন।



















