চার মাস পর দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, ঢাকায় চূড়ান্ত নিরাপত্তা, নেতাকর্মীদের ঢল
দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বিএনপি নেত্রীকে স্বাগত জানাতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সাজানো হয়েছে জনসমাগম ও দলীয় শোডাউনের এক বিশাল আয়োজন।
বিমানবন্দরে আঁটসাঁট নিরাপত্তা, পুলিশের নজিরবিহীন প্রস্তুতি
খালেদা জিয়ার আগমন ঘিরে বিমানবন্দর এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র্যাব এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। টার্মিনাল এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা চেকপোস্ট।
বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশান পর্যন্ত রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের টহল এবং ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যানজট এড়াতে মূল সড়কের আশপাশের কিছু রাস্তা আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খল অবস্থান পরিকল্পনা
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে পুরো রুটজুড়ে নেতাকর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি সহযোগী সংগঠন নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে অবস্থান করবে।
-
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি: বিমানবন্দর থেকে লো মেরিডিয়েন হোটেল পর্যন্ত
-
ছাত্রদল: লো মেরিডিয়েন থেকে খিলক্ষেত
-
যুবদল: খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন
-
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি: হোটেল র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম
-
স্বেচ্ছাসেবক দল: আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান
-
কৃষক দল: বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড়
-
শ্রমিক দল: কাকলী মোড় থেকে শেরাটন হোটেল
-
ওলামা, তাঁতী, জাসাস, মৎস্যজীবী দল: শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার
-
পেশাজীবী সংগঠন: বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২
-
মহিলা দল: গুলশান-২ থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত
প্রতিটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং ব্যানার হাতে নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। পুরো পরিবেশে যেন এক নির্বাচনী মিছিলের আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
‘ফিরোজা’য় প্রস্তুত বেগম জিয়ার বাসভবন
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ ইতোমধ্যেই তাঁর আগমনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৮০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটি ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। বাসভবনের সামনে পুলিশ ও সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা পালাক্রমে নিরাপত্তা পাহারায় রয়েছেন।
বাড়ির ভেতরের সব কক্ষ পরিষ্কার করা হয়েছে, লন ও বাগান সাজানো হয়েছে ফুলগাছ দিয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য সরবরাহও পুনর্বিন্যস্ত করা হয়েছে যেন কোনো সমস্যা না থাকে।
দলীয় নেতাদের প্রস্তুতি ও উচ্ছ্বাস
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, ‘ফিরোজা’ বাসভবন পুরোপুরি প্রস্তুত। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও তাঁর ফেরার সব প্রস্তুতি তদারকি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন কেবল ম্যাডামের ফেরার অপেক্ষায় আছি। পুরো দল চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তার উপস্থিতিই আমাদের সাহস।”
রাজনৈতিক তাৎপর্য
বেগম খালেদা জিয়ার এই প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত চিকিৎসা শেষে ঘরে ফেরা নয়—এটি রাজনৈতিক অঙ্গনেও বড় বার্তা বহন করছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁর দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ময়দানে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকের মতে, তাঁর ফেরার পর বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম নতুন গতি পেতে পারে।



















