close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যু দ্ধে বাংলাদেশি নি হ ত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইউরোপ যাওয়ার লোভ দেখিয়ে দালালরা হাবিবুল্লাহকে পাঠিয়েছিল রাশিয়ায়, যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে। ফিরলেন না, ফিরলেন খবর হয়ে – সহযোদ্ধার মুখে মায়ের কান্নার গল্প।..

ইতালির স্বপ্ন দেখেছিল হাবিবুল্লাহ। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ কফিনে বন্দি। ইউরোপের রঙিন জীবনের আশায় ঘর ছেড়ে রওনা হওয়া নরসিংদীর এই তরুণ শেষমেশ লাশ হয়ে ফিরলেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে। একের পর এক দালালের ফাঁদে পড়ে তার জীবন শেষ হয়েছে অন্যের স্বার্থের বলি হয়ে।

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক ভূঁইয়া ও মানসুরা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া। মাত্র ২০ বছর বয়সী এই তরুণের চোখে ছিল ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন। এইচএসসি পাস করার পর থেকেই সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। পরিবারও ছেলের স্বপ্ন পূরণে পিছপা হয়নি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ব্রাহ্মন্দী গ্রামের এক দালাল ফারুকের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে হাবিবুল্লাহর পরিবার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ফারুক তাকে সৌদি আরবে পাঠান ওমরাহ ভিসার মাধ্যমে। সেখানে দুই মাস থাকার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তুরস্ক হয়ে তাকে পাঠানো হয় রাশিয়ায়।

কিন্তু রাশিয়ায় পা রাখতেই বিপদ। ইমিগ্রেশনে আটক হন হাবিবুল্লাহ। পরে ঢাকার আরেক দালাল শফিক ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেন সুলতান নামে আরেক মানবপাচারকারীর কাছে। এখানেই শুরু হয় বিভীষিকাময় অধ্যায়।

সুলতান তাকে একটি রুশ ভাষায় লেখা চুক্তিপত্রে সই করতে বলেন, বলা হয় কাজ হবে রুশ সেনা ক্যাম্পে পরিচ্ছন্নতার। কিন্তু পরে জানা যায়, হাবিবুল্লাহকে পাঠানো হচ্ছে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে। সেনা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাকে প্রস্তুত করা হয় ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য।

গত ২৭ মার্চ, রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি ইউনিটের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেন হাবিবুল্লাহ। যুদ্ধ শেষে বিশ্রামের সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর হঠাৎ হামলায় মৃত্যু হয় তার। বুধবার পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছায় তার এক বাংলাদেশি সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। ভেঙে পড়েন মা মানসুরা বেগম ও বাবা আবু সিদ্দিক। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাবিবুল্লাহর মা বলেন, “ও তো দেশে ফিরতে চাইতো, ফোনে কাঁদতো। এত টাকা খরচ করলাম, এখন ছেলেকে ফিরিয়ে আনবো কফিনে? দালালরা একে একে আমাদের সন্তানদের ধ্বংস করছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।”

বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, “আমার ছেলে যুদ্ধ করতে যায়নি। সে গিয়েছিল স্বপ্ন দেখতে, বেঁচে থাকার আশা নিয়ে। কিন্তু একের পর এক দালাল তাকে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর মুখে।”

বন্ধু নাইম ইসলাম অভি বলেন, “দালালরা ওকে মিথ্যে কথা বলে নিয়ে গেছে। সেখানে ভয়ংকর নির্যাতন করেছে। শেষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। ও মারা গেছে, কিন্তু আমরা এর বিচার চাই।”

এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষজনও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
প্রতিবেশী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “ছেলেটা আমাদের সবার প্রিয় ছিল। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এই দালাল চক্রের শিকড় উপড়ে ফেলা দরকার।”

পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দুটি দাবি জানানো হয়েছে—এক, হাবিবুল্লাহর মরদেহ দ্রুত ফিরিয়ে আনা হোক; দুই, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সেইসব দালালদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, “আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিনি। পরিবার তথ্য দিলে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো এবং দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”


 

হাবিবুল্লাহর মৃত্যু কেবল একজন তরুণের স্বপ্নভঙ্গ নয়, এটি মানবপাচার ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের একটি ভয়ংকর বাস্তব উদাহরণ। এমন ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে নির্দয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator