close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ড. ইউনূস পশ্চিমা চোখে দেখলে দেশের মাঠের খেলায় হেরে যাবেন : তুহিন মালিক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রাম বন্দর, রাখাইন করিডর, ও নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে সতর্ক করে দিয়েছেন—পশ্চিমা..

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া, রাখাইনে মানবিক করিডরের প্রস্তাব, এবং নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ জাতিকে বিভক্ত করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে এক সরব বার্তা দিয়েছেন—যেখানে দেশের স্বার্থ অগ্রাহ্য করে পশ্চিমা চিন্তা চাপিয়ে দিলে ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ।

শনিবার রাতে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তুহিন মালিক লিখেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার হচ্ছে অনেকটা সীমিত ওভারের ইনিংসের মতো। ওভার সীমিত, বল সীমিত, তাই ‘রাউন্ড দ্য উইকেট’ খেলতে হবে। পিচের বাইরে বল ছুঁড়ে ওয়াইড খেললে বিপদ অবশ্যম্ভাবী।”

তিনি মনে করেন, এই সরকারের সময়কাল ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে যেগুলো রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক, এবং সেগুলো জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও জনমতের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।


চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ক্ষোভ

তুহিন মালিক প্রশ্ন তুলেছেন, “চট্টগ্রাম বন্দর এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও লাভজনক। তাহলে হঠাৎ করে বিদেশিদের হাতে ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা কোথায়?” তিনি এটিকে রহস্যজনক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল।


রাখাইন করিডর প্রশ্নে অনিশ্চয়তা

মিয়ানমারের রাখাইনে প্রস্তাবিত মানবিক করিডর নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তুহিন মালিক। তিনি বলেন, “এই করিডর থেকে আমাদের কী লাভ—তা এখনও পরিষ্কার নয়। সরকারের মন্ত্রীরা একেকজন একেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করছে।” তিনি আরও বলেন, “বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির সংঘাতে বাংলাদেশ জড়াতে চায় না। অথচ সরকার এমন পথে হাঁটছে, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।”


নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে উদ্বেগ

নারী সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব নিয়ে তুহিন মালিক বলেন, “এগুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, পারিবারিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় পারিবারিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকার যদি এই ইস্যুগুলো উপেক্ষা করে, তাহলে তা সমাজে বিভাজন তৈরি করবে।”


ড. ইউনূসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা রেখেও তুহিন মালিক সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে। তিনি লিখেছেন, “ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু দেশীয় মাঠে খেলতে হলে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। দেশের বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত না নিলে আপনি মাঠেই হেরে যাবেন।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি এনজিও দুনিয়ার পথিকৃৎ, নোবেলজয়ী। কিন্তু সবকিছু যদি আপনি পশ্চিমা চোখে বা এনজিও দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে দেশের ভেতরের পরিস্থিতি বুঝবেন না। মাঠের খেলা মাঠে খেলতে হয়, বৈশ্বিক কৌশলে নয়।”


‘সঠিক এজেন্ডায় থাকুন’—সাবধানতা বার্তা

তুহিন মালিকের কথায় স্পষ্ট যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই সাবধান হতে হবে। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর, রাখাইন করিডর, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব—এসব কিছুই মূল সংস্কার কাঠামোর অংশ নয়। সরকারের উচিত সঠিক এজেন্ডা অনুসরণ করা এবং অপ্রয়োজনীয় ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা।”

তার মতে, “যদি আপনি সঠিক বলটি না করেন, তবে ওয়াইড হয়ে যাবেন। এবং তখন আপনি হারবেন—এটা নিশ্চিত।”


ড. ইউনূসের সামনে চ্যালেঞ্জ

ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া তুহিন মালিকের এই বার্তা শুধু একক ব্যক্তিকে নয়, পুরো অন্তর্বর্তী সরকারকেই একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে গণচেতনা, সার্বভৌমত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন জরুরি—তা না হলে শুধু বিদেশ নয়, দেশের মাটিতেই নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলতে হবে।

No comments found