ড. ইউনূস ও শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বৈঠক আজ: বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আসতে পারে বড় চুক্তি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ..

আজ (২৮ মার্চ) চীনের বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকটি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে থাকবে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা জানা গেছে, বাংলাদেশ চায় চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি বিনিয়োগ করুক। বিশেষ করে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, যার আওতায় বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন ডলার) অনুদান পাবে। এই অর্থ দিয়ে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

রোহিঙ্গা সংকট ও সামরিক সহযোগিতা বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চীনের কূটনৈতিক সহায়তা প্রত্যাশা করছে, যাতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। এছাড়া, সামরিক বিষয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে পানি ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

চীনের প্রতিশ্রুতি ও বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাশা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছেন, এই সফরটি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াংও এক বৈঠকে জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী।

বাংলাদেশ চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর সুদের হার ৩ শতাংশ থেকে ১-২ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে চীনের তৈরি পোশাক কারখানা, বৈদ্যুতিক যানবাহন, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস ও সৌর প্যানেল শিল্প স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনাও হবে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের কৌশল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে তা আরও শক্তিশালী হবে। চীন আশা করছে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

এদিকে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর আরও জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Tidak ada komentar yang ditemukan


News Card Generator