বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। বুধবার (২৯ মে) সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, দমকা হাওয়া ও দফায় দফায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টির পাশাপাশি সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি। দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১৫-২৫ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানান, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আজ দুপুরে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও ভারতের সাগরদ্বীপের মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং সংলগ্ন নদীবর্তী অঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি ঢলেরও শঙ্কা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকা, নিমতলা, আগ্রাবাদ, চকবাজার, পতেঙ্গা, হালিশহর, বাকলিয়া, কলসীদীঘিরপাড়, ভিক্টোরিয়া গেটসহ একাধিক নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়কে পানি উঠে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমে জনভোগান্তির পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতিতে সমুদ্র ও নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা ও নৌযান চলাচল আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, “জেলায় মোট ১১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপকূলবর্তী গ্রামগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। পাশাপাশি মেডিকেল টিম, স্বেচ্ছাসেবক দল ও উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরও দুর্বল হলেও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আগামী তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ:
সমুদ্র ও নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় ২-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা।
পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসের সতর্কতা।
উপকূলীয় ও নদীবর্তী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ।
বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা এড়িয়ে ঘরে থাকার পরামর্শ।
সবশেষ তথ্যের জন্য চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://bmd.chittagong.gov.bd) ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমের আপডেট অনুসরণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।



















