close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

চট্টগ্রামে তরুণ নেতার নাটকীয় পদত্যাগ: ভেঙে পড়ল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐক্য!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দক্ষিণ জেলা কমিটির সদস্য আবদুল হাফিজ হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতের বেলায় দেওয়া পোস্টে উঠে এসেছে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, জনসমর্থন হারা..

চট্টগ্রাম: দীর্ঘ সময় ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করে আসা লোহাগাড়ার তরুণ নেতা আবদুল হাফিজ হঠাৎ করেই তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত ১০টার দিকে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি আবেগঘন পোস্টে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানান, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আবদুল হাফিজ। তার বাড়ি জেলার লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের রশিদার ঘোনা এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন এবং তাকে সংগঠনের একজন উদীয়মান মুখ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

ফেসবুকে আবেগঘন বিদায়বার্তা

নিজের পোস্টে তিনি লিখেন,

"আমি আপনার সংগঠনের একজন একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিগত সময়গুলোতে কাজ করে গেছি এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে শহীদ ভাই ও বোনদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারণে আমি এই পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।"

এই লেখায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আবদুল হাফিজের পদত্যাগ কেবল ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি এক ধরনের হতাশা ও আস্থাহীনতার প্রতিফলন।


জুলাই অভ্যুত্থানের বিভক্তি: আন্দোলনের ভিত কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে?

পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবদুল হাফিজ আরও খোলামেলা কথা বলেন। তিনি বলেন,

“৫ আগস্টের পরপর আমাদের প্রতি মানুষের যে সম্মান, ভালোবাসা ছিল, সেটা এখন আর নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে, তা আমাকে হতাশ করেছে। আমি চাই না, কোনো অপকর্মের দায় আমার কাঁধে পড়ুক।”

এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, আন্দোলনের অভ্যন্তরে পরস্পরের প্রতি আস্থার সংকট, দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য ও সংগঠন পরিচালনায় অস্বচ্ছতা রয়েছে, যা একজন তরুণ নেতাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।


সংগঠনের প্রতিক্রিয়া: কী বলছে নেতৃত্ব?

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা শাখার আহ্বায়ক জুবাইর হোসেন বলেন,

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাফিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেখেছি। এরই মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছে। তবে লিখিত কোনো পদত্যাগপত্র দেয়নি।”

তিনি আরও বলেন,

“যদি কমিটির কেউ অপকর্মে জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সংগঠনের নেতৃত্ব একপ্রকার চাপের মধ্যে রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: রাজনীতি নয়, পরিবার ও পড়াশোনায় মনোযোগ

আবদুল হাফিজ বলেছেন, তিনি এখন থেকে পড়াশোনা, পারিবারিক ব্যবসা ও ব্যক্তিগত কাজে মনোনিবেশ করতে চান।

“আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত আমাকে হতাশ করেছে। আমি আমার সময় এবং মনোযোগ এমন কিছুতে দিতে চাই, যেখানে স্বচ্ছতা ও ইতিবাচকতা থাকবে।”


বিশ্লেষণ: নতুন তরুণরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে?

এই পদত্যাগ অনেকের জন্য হয়তো নিছক এক সদস্যের সরে যাওয়া বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ভিতরের বাস্তবতা ভিন্ন। তরুণদের মধ্যে যারা স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন, তারা যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, বিভাজন ও অপকর্মের দায়ে নিজেদের সরিয়ে নিতে শুরু করেন, তবে আগামীতে নেতৃত্বশূন্যতার শঙ্কা তৈরি হতে পারে।


উপসংহার

আবদুল হাফিজের পদত্যাগ একদিকে যেমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা, অন্যদিকে এটি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বাস্তবতায় তরুণদের অংশগ্রহণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এখন সময়, সংগঠনগুলোকে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও তরুণবান্ধব করে তোলার।

Aucun commentaire trouvé