ঢাকা, ১৪ এপ্রিল — চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চলমান যৌথ পরিকল্পনাগুলোকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ। আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা জানান।
বৈঠকে উভয়পক্ষ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চীন সফরের আলোকে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে একমত হন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নসহ নানা বিষয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চীন সফরে আলোচিত পরিকল্পনাগুলো এখন আমাদের অগ্রাধিকার। এগুলো বাস্তবায়নে গতি বজায় রাখা জরুরি।”
চীনা রাষ্ট্রদূতও একমত প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আর কয়েক বছর চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে চাই না—আমরা এখনই কাজ শুরু করতে আগ্রহী।”
অর্থনৈতিক অঞ্চল ও অবকাঠামো উন্নয়ন
মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা এগোচ্ছে। বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানান, প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে এসব জোন ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়াও, চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, যা জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বড় প্রতিশ্রুতি
চীন বাংলাদেশে একটি ১,০০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণেও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। চীনা পক্ষ চিকিৎসা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ এবং কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়েছে।
সাংস্কৃতিক বিনিময় ও ভাষা শিক্ষা
অধ্যাপক ইউনূস একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশি তরুণরা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
দুই দেশ তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ৫০ বছরের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জল ব্যবস্থাপনায় যৌথ গবেষণার ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে।
পাট ও কৃষিপণ্যে নতুন দিগন্ত
চীনে পাট রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনার পাশাপাশি লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণে চীনের বিনিয়োগ আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত কেন্দ্র দুটি হবে চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সক্ষমতা উন্নয়ন পরিকল্পনাও আলোচনায় এসেছে।
এই মৌসুমেই চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে বাংলাদেশ এবং আগামী বছর কাঁঠাল রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আম উপহার দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর শিগগিরই
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার সঙ্গে থাকবেন চীনা বিনিয়োগকারীদের ১০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বিডা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে খাতভিত্তিক আলোচনা জোরদারে একটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করা হবে।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার সহকারী ফয়েজ তাইয়েব।



















