close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের ঝাঁজে বিপদে উন্নয়নশীল দেশগুলো: বাংলাদেশের জন্য ইউরোপই হতে পারে নতুন ভরসা!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, এই সংঘাতের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানি বাজারে। বাংলাদে..

বিশ্ব অর্থনীতির অশনি সংকেত: বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা, ইউরোপ হতে পারে উত্তরণের পথ

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, আর এর প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোয়। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থার (আইটিসি) নির্বাহী পরিচালক পামেলা কোক-হ্যামিল্টন সম্প্রতি এক বার্তায় বলেন, বর্তমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বৈদেশিক সহায়তা কমানোর চেয়েও ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে অর্থনীতিতে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীন ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো সরাসরি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনছে।

পামেলা কোক-হ্যামিল্টন বলেন, “চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এর ঢেউ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি) জানায়, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ববাণিজ্যের ৩ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস ঘটাতে পারে। বিশ্বজুড়ে জিডিপি কমে যেতে পারে ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত। এই ধাক্কা সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে যেসব দেশ রপ্তানিনির্ভর—বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রমুখী রপ্তানি প্রবাহ এই সংকটের বড় শিকার হতে পারে। আইটিসির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক বহাল থাকলে বাংলাদেশ ২০২৯ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হারাতে পারে মার্কিন বাজারে।

এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থা বাংলাদেশের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমিয়ে ইউরোপীয় বাজারে দৃষ্টি দেওয়া। কারণ ইউরোপীয় বাজারে এখনো স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও যথেষ্ট। কোক-হ্যামিল্টন মনে করেন, “বাংলাদেশের জন্য ইউরোপই হতে পারে একটি নিরাপদ ও লাভজনক বিকল্প বাজার।”

এছাড়া আইটিসি আরও জানিয়েছে, লাওস, মিয়ানমার, মাদাগাস্কার, লেসোথো এবং কম্বোডিয়ার মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ খুঁজছে মার্কিন বাজারে সম্ভাব্য ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত আইটিসি যে বিশ্লেষণটি করেছে, সেটি ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতাদেশ এবং পরবর্তীতে চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক বৃদ্ধির তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। তাদের আশঙ্কা, এই বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এখনই বিকল্প বাজার এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য কাঠামো উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি শুধুই একটি সতর্কবার্তা নয়, বরং সামনে এগোনোর কৌশল নির্ধারণের সময়।

Комментариев нет