close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ছাত্রলীগ নেতার নাম 'জুলাই যোদ্ধা' তালিকায়: আন্দোলনের মুখে পীরগঞ্জ প্রশাসন চাপে!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পীরগঞ্জে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের তালিকায় ছাত্রলীগ নেতার নাম দেখে বিস্মিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, আন্দোলন দমন ও গ্রেফতার হয়েও কিভাবে এই স্বীকৃতি পেল—সেই প্রশ্নে উত্তাল পুরো এলাকা।..

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এই তালিকায় হাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন রায়-এর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাবেক আন্দোলনকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিগত দিনে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি ছাত্র ও নাগরিকদের উপর হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, তবুও কীভাবে এই তালিকায় স্থান পেলেন?

ঘটনার সূত্রপাত ২০২4 সালের ৪ আগস্ট, যখন পীরগঞ্জে চলছিল একটি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষা আন্দোলন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুমন রায়, যিনি তখন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে ছিলেন, এই হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন সৈকত।

এমনকি আন্দোলন দমনের পর সামাজিক মাধ্যমে তিনি একাধিক গণঅভ্যুত্থানবিরোধী পোস্ট দিয়েছিলেন। সরকার পতনের বিরোধিতা, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও অনলাইন প্রচারে সক্রিয় থাকার তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতেই।

আন্দোলন দমনের জন্য চলমান ডেভিলহান্ট অপারেশন-এ তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরও তিনি রাজনৈতিকভাবে আবার সক্রিয় হন এবং সরকারি দলের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করতে থাকেন।

এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নাম ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকায় ৩ নম্বরে থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
তাদের মতে, তিনি আদর্শ ও ত্যাগের মূল্যবোধকে পদদলিত করে অপকৌশলে স্বীকৃতি আদায় করেছেন।

২০২5 সালের ২৫ জুন, বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আলমগীর হোসেন সৈকত।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন

সুমন রায় এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বড় আন্দোলনের ডাক আসবে।

তিনি আরও দাবি করেন, একজন সরাসরি আন্দোলনবিরোধী ব্যক্তি, যার অতীতে জেল খাটার ইতিহাস রয়েছে, সেই কীভাবে তথ্য গোপন করে স্বীকৃতি পেলেন, তা তদন্তের দাবি রাখে।

আমি কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, তবে সরকার পতনের পক্ষপাতী ছিলাম না।

কিন্তু এরপরই যখন প্রশ্ন করা হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ স্বীকৃতি কিভাবে পেলেন? — তখন তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন বন্ধ করে দেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান জানান

আমি এখানে কিছুদিন হলো যোগ দিয়েছি। তালিকা আমার আসার আগেই তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্য গোপন করে কেউ যদি নিজেদের নাম ঢুকিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাতিল করা হবে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় আজ শুধু সম্মানের নয়, বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপার। একজন বিতর্কিত ছাত্রনেতা, যিনি নিজে আন্দোলন দমন করেছেন, ফেসবুকে সরকারবিরোধীদের হেয় করেছেন, তাকে যদি ‘যোদ্ধা’ বানানো হয় — তাহলে প্রকৃত যোদ্ধারা কোথায়?

এই ঘটনা শুধু একজন সুমন রায়ের নাম অন্তর্ভুক্তি নয়, বরং গোটা তালিকা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আঘাত হেনেছে।
দেখার বিষয়, প্রশাসন সত্য উদঘাটনে কী ব্যবস্থা নেয় — নাকি জনগণের আস্থার জায়গাটি আরও এক ধাপ নিচে নেমে যায়।

لم يتم العثور على تعليقات