close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ছাত্রলীগ কর্মী পেলেন ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের পদ....

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হলেন পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মী! কমিটিতে নাম উঠতেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ঘটেছে বিক্ষোভ, হুমকি দেওয়া হচ্ছে কঠোর কর্মসূচির।....

চট্টগ্রামে বিএনপি-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীকে স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক করায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে। অভিযোগ উঠেছে, শহীদুল ইসলাম নামের যিনি আহ্বায়ক হয়েছেন, তিনি এলাকায় একজন পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মী। অথচ তাঁকেই বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্বে বসানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে শহীদুল ইসলামকে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এই কমিটিতে ২১ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৪৮ জন সদস্য স্থান পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন ১৫ থানার পূর্ণাঙ্গ এবং ১২টি ওয়ার্ডের আংশিক কমিটি অনুমোদিত হয়েছে।

শহীদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করার খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে স্থানীয় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা। পরদিন শুক্রবার এলাকাজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
নেতাকর্মীদের স্লোগান ছিল স্পষ্ট— স্বৈরাচারের দোসরদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে, নইলে কঠোর কর্মসূচি আসবে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, যিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন, যাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে অসংখ্য ছবি-ভিডিও রয়েছে, তাঁকে দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো চরম অপমান।

আকবর শাহ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির আহমেদ বলেন,আমরা যারা মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, জীবন দিয়ে দলের পাশে থেকেছি, তাদের বাদ দিয়ে এমন একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, যাকে এলাকায় কেউ দেখেনি বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে।

তিনি আরও বলেন,এমন কেউ হলেও মানা যেত, কিন্তু যাঁর পরিচয় ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত—তাঁকে পদ দেওয়া ত্যাগীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

এমনকি প্রতিবাদস্বরূপ তিনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেছেন।

ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রেহান উদ্দীন বলেন,শহীদুল ইসলামকে আমি কোনো মিছিল বা দলের প্রোগ্রামে দেখি নাই। সবাই তাঁকে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চেনে। নাম ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

তিনি বিষয়টি নগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানিয়েও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন।

এই ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের সক্রিয় কর্মী মোহাম্মদ রনি বলেন,তিনটা মামলায় আসামি হয়েছি, মিছিল-সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছি, অথচ আমার জায়গায় একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে পদ দেওয়া হলো! এটা কষ্টের চূড়ান্ত।

তিনি আরও বলেন,যদি আমাকে বাদও দিত, দলের যেকোনো ত্যাগী নেতাকে দিলে কিছু বলতাম না। কিন্তু পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীকে দিলে এটা কি বিএনপির জন্য সম্মানজনক?

প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে শহীদুল ইসলাম দাবি করেন,আমি এলাকায় থাকতাম না, তাই অনেকে চেনেন না। তবে মহানগরের বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে অংশ নিয়েছি।

ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে থাকা ছবি-ভিডিও প্রসঙ্গে বলেন,সবই সামাজিক অনুষ্ঠানের ছবি, দলীয় কিছু না। আমি আওয়ামী লীগের কেউ না, সতর্কভাবে চলেছি বলে মামলা হয়নি।

নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জমির উদ্দিন বলেন,একসঙ্গে অনেক কমিটি করা হয়েছে। কারো নাম ভুলে চলে আসতেই পারে। তদন্তে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাদ দেওয়া হবে।

চট্টগ্রামে বিএনপির ভেতরে চলমান এই ঘটনা শুধু অভ্যন্তরীণ কোন্দল নয়, বরং তা নেতাদের সিদ্ধান্ত ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ত্যাগের মধ্যে যে ফাটল তৈরি হয়েছে, তার নগ্ন উদাহরণ।
এ ঘটনার দ্রুত এবং গ্রহণযোগ্য তদন্ত না হলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ আরো তীব্র হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মকৌশলে।

No comments found


News Card Generator