চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। কারণ, ওই কমিটিতে একজন সক্রিয় ছাত্রলীগ নেতাকে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা ছাত্রদল সদ্য ঘোষণা করেছে চককীর্তি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাত্রদলের কমিটি। সেখানে ‘১ নম্বর সদস্য’ হিসেবে স্থান পেয়েছেন শাহরিয়ার নাফিস নামের এক ছাত্র। তবে বিস্ময়কর তথ্য হলো, শাহরিয়ার নাফিস একইসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চককীর্তি ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও রয়েছেন।
ছাত্রলীগের একটি অফিসিয়াল প্যাডে তাঁর নাম ও পদ উল্লেখ থাকায় বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টিগোচর হয়েছে স্থানীয় সাংবাদিকদের। সেই প্যাডের কপি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে। কেউ বলছেন, এটি ছাত্রদলের নীতিবিরোধী সিদ্ধান্ত, কেউ আবার বলছেন এটি পরিকল্পিত ‘দখলদারিত্বের’ প্রয়াস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রদলের একজন সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, “কমিটি গঠনের আগে সুষ্ঠু যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল। এমন একজন ব্যক্তিকে দলে স্থান দেওয়া সংগঠনের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। ছাত্রদল যদি আদর্শ নিয়ে চলে, তাহলে এই বিতর্কিত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়া জরুরি।”
এদিকে এই বিতর্কের পরও নবগঠিত কমিটির সভাপতি মুক্তাদির আলী রক্ষণাত্মক অবস্থানে। তিনি বলেন, “শাহরিয়ার নাফিস বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ছিল। আমরা জানি, আন্দোলনের সময় তার বাসায় পুলিশ পর্যন্ত গিয়েছিল। সে ছাত্রলীগে থাকলেও ছাত্রদলের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই আমরা তাকে কমিটিতে রেখেছি।”
এই বক্তব্য আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে কি ছাত্রদলে এখন দলীয় পরিচয় ও রাজনৈতিক ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না? নাকি আদর্শের জায়গায় ব্যক্তিগত ‘ক্রিয়াশীলতা’ হয়ে উঠেছে একমাত্র মানদণ্ড?
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ ঘটনা ছাত্রদলের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। যদি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কমিটি গঠনে এমন গাফিলতি ও অবহেলা দেখায়, তবে ভবিষ্যতে সংগঠন ও জনসমর্থন—দুটিই হারানোর ঝুঁকি বাড়বে।
বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্ররাজনীতির এই দ্বৈত চরিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও বিতর্ক তৈরি করছে। অনেকে বলছেন, “ছাত্ররাজনীতি কি এখন আদর্শ নয়, সুবিধাবাদীদের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে?”
এদিকে জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে চাপে পড়ে তাঁরা দ্রুত এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—ছাত্রদল কি এখন যাচাই-বাছাই না করেই কমিটি ঘোষণা করছে? নাকি এটি কোনো পরিকল্পিত ‘সেটআপ’?
এই ঘটনা প্রমাণ করছে, দেশের ছাত্ররাজনীতি এখন আদর্শ ও বাস্তবতার মাঝপথে আটকে পড়েছে। একদিকে সংঘাতময় দলীয় অবস্থান, অন্যদিকে একই ব্যক্তির দুই রাজনৈতিক পরিচয়—যা আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।