ছাত্রদল নেতার হা তু ড়ি পে টা য় জাসদ কর্মী নি হ ত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ছাত্রদল সভাপতির নেতৃত্বে হাতুড়ি ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে জাসদ কর্মী জমিরকে। দিনের আলোয় মসজিদের সামনে এ ধরনের নির্মম হামলা স্থানীয়দের হতবাক করেছে। জমিরকে হাসপাতালে নেয়ার..

সোমবার (৩০ জুন) দুপুরটা যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে এসেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের মিটন মন্ডলপাড়া গ্রামে। দিনদুপুরে প্রকাশ্যেই হাতুড়ি ও হকিস্টিক নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো এক রাজনৈতিক কর্মীকে। নিহত ব্যক্তির নাম জমির (৪৮), যিনি দীর্ঘদিন ধরে জাসদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

জানা যায়, জমির ছিলেন মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে এবং স্থানীয়ভাবে একজন পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন ধরে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর সঙ্গে ছাত্রদলের স্থানীয় নেতাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্বই শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী রূপ নেয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে মিটন গ্রামের একটি মসজিদের সামনে জমিরের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। অভিযুক্তরা হলেন আমলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অনিক মাহমুদ, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাঈম ও মাজহারুল। তারা প্রথমে জমিরকে মসজিদের কাছে একা পেয়ে ঘিরে ফেলে এবং এরপর হাতুড়ি ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। স্থানীয়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাস্থল রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।

তীব্র রক্তক্ষরণ ও মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে জমিরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর চিকিৎসকরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা গেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, জমিরের মাথা, ঘাড় ও পিঠে একাধিক গুরুতর আঘাত ছিল যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, "দুপুরে শত্রুতার জের ধরে জমিরকে হাতুড়ি ও হকিস্টিক দিয়ে মারধর করা হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি এবং পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।"

ঘটনার পর থেকেই মিটন মন্ডলপাড়া গ্রামে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোনো সহিংসতা না ঘটে, সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মী হত্যা হওয়ার কারণে জাসদ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। অনেকে বলছেন, এটি কোনো সাধারণ বিরোধ নয়, বরং উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।

নিহতের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী রাজনীতি করতেন, কিন্তু কারো সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। তাকে যারা মারলো, তারা আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করে রেখেছিল।”
এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, “আমরা জীবনে অনেক ঝামেলা দেখেছি, কিন্তু মসজিদের সামনে হাতুড়ি দিয়ে কাউকে পেটানোর মতো ভয়াবহ দৃশ্য আর কখনও দেখিনি।”

এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে এলো দেশের রাজনীতিতে সহিংসতার নগ্ন চিত্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে আজ মানুষের জীবন কতটা সস্তা হয়ে উঠেছে, সেটাই যেন এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল।একজন মধ্যবয়সী জাসদ কর্মীর মৃত্যু শুধুমাত্র একটি শোকের সংবাদ নয়, এটি রাজনৈতিক পরিবেশের নৈতিক পতনের প্রতীক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি স্থানীয়দের একটাই দাবি—এই বর্বর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ আর রাজনৈতিক পরিচয়ের বলি না হয়।

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator