গাজীপুর নগরীর পোড়াবাড়ী এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মীকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযোগ, তারা স্থানীয় একটি এনজিওর কর্মকর্তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এই ঘটনায় পুলিশের অভিযান, গ্রেফতার, এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ঘিরে গাজীপুরে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী এলাকার মাস্টারবাড়ি থেকে এই ১০ জনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন—গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন (২৮), যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য ইসমাইল হোসেন (৪০), যুবদলের সদস্য মকবুল হোসেন (৪৩), মো. জাহাঙ্গীর (৪০), কবির হোসেন (৩২), শফিকুল ইসলাম (৩৬), মহিউদ্দিন (৩০), শাহিন ভূঁইয়া (৩৭), পলাশ হাওলাদার (৩১) ও রেজাউল করিম (৪২)। তাদের গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বরিশাল, রংপুর, ভোলা, নীলফামারী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বলে জানা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সৃজনী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক সোহেল রানার কাছে ওই নেতা-কর্মীরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সোহেল রানা যৌথবাহিনী ও সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী রোববার দুপুরে পোড়াবাড়ী র্যাব ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযুক্তদের আটক করে। পরে তাদের গাজীপুর সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তবে এই ঘটনায় ভিন্নমত পোষণ করছেন বিএনপিপন্থী ছাত্র ও যুব নেতারা। গাজীপুর মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান জানান, “যে এনজিও কর্মকর্তার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, তিনি আসলে ঢাকার বিএনপির এক নেতার আত্মীয়ের কাছে দেনা ছিলেন। টাকা আদায়ের বিষয়ে সমঝোতা বৈঠক হচ্ছিল মাত্র। কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। এনজিও মালিক সেনাবাহিনী ডেকে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।”
এমনই বক্তব্য দেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. রোহানুজ্জামান। তার ভাষ্য, “ঘটনাটি একটি বড় ভুল বোঝাবুঝি। তারা কেউ চাঁদাবাজি করতে যায়নি। বিষয়টি ছিল একটি পাওনা টাকা আদায়ের আলোচনা।”
এদিকে গাজীপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক কায়সার হোসেন জানান, “আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে ১০ জনকে আটক করেছি। তাদের থানায় রাখা হয়েছে। সোমবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।”
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে পুলিশের এমন তৎপরতায় কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও, দড়ি বেঁধে আটক করে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ।
এখন দেখার বিষয়, আদালতে এই মামলার কী পরিণতি হয় এবং তদন্তে আসলে কোন সত্য বের হয়ে আসে।