চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে কাকরাইলে অবস্থান নেওয়া সাবেক বিডিআর সদস্যদের ওপর পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে, কয়েকজন আটক।
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে সোমবার দুপুরে এক অস্বাভাবিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্যরা তাদের তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভে বসেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি হঠাৎই রূপ নেয় সংঘর্ষে, যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাকরাইল মসজিদের সামনে চাকরিচ্যুত সদস্যরা অবস্থান নেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা বাসভবনের (যমুনা) সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন। তাদের দাবি ছিল— চাকরিতে পুনর্বহাল, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত কমিশনের ধারা বাতিল, এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে তাদের সরিয়ে নিতে আহ্বান জানানো হয়। এরপর ১০ মিনিটের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে সাড়া না দিলে বেলা সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, যার বিকট শব্দে মুহূর্তেই এলাকা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে চালানো হয় জলকামান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ৬টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় এবং তীব্র জলচাপ প্রয়োগ করা হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। এতে আন্দোলনকারী ও পুলিশ— উভয় পক্ষেরই অনেকে আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় কাছাকাছি হাসপাতালে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় কাকরাইল মোড় ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ জনগণ পথ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। পুলিশ পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে নিয়ে যায় মৎস্যভবনের দিক দিয়ে।
এর আগে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড় থেকে যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা দেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। মিছিলটি কাকরাইল পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে তাদের প্রথম ধাক্কা লাগে এবং পরবর্তীতে সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে যান তারা।
তাদের দাবি ছিল তিনটি:
১. বিডিআর সদস্যদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও ক্ষতিপূরণ প্রদান
২. পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিষয়ক তদন্ত কমিশনের বিতর্কিত ধারা বাতিল
৩. কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের মুক্তি এবং বিডিআর নাম পুনর্বহাল
এই দাবিগুলো তারা বেশ কিছুদিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন, তবে আজকের কর্মসূচিতে পুলিশের এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ অনেকের মাঝে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তারা এটাও জানান যে, এ ধরনের হামলা তাদের আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডির পর এই বিডিআর সদস্যদের অবস্থান নিয়ে বরাবরই বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা ছিল। তাই তাদের এ আন্দোলন একটি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ও মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।