close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ছায়া দেখে শনাক্ত হলো মহাজাগতিক অদৃশ্য গ্রহ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে ৩২০০ আলোকবর্ষ দূরে এক ‘অদৃশ্য’ গ্রহ আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রচলিত মহাজাগতিক ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।..

মহাকাশ গবেষণার জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে উত্তেজিত গোটা বৈজ্ঞানিক বিশ্ব। আইনস্টাইনের শতবর্ষ পুরনো আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যা সরাসরি দেখা যায় না—শুধু ছায়া দেখে তার অস্তিত্ব নিরূপণ করা হয়েছে। এই রহস্যময় গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে ‘AT2021uey b’

বিশাল এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,২০০ আলোকবর্ষ দূরে এবং আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের বিজ্ঞানীরা, যাঁরা পোল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের গবেষকদের সঙ্গে মিলে কাজ করেছেন।

এই গ্রহ শনাক্ত করার জন্য বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন একটি বিশেষ পদ্ধতি—গ্র্যাভিটেশনাল মাইক্রোলেন্সিং। এই পদ্ধতি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত। এর মূল ধারণা হলো, যখন একটি তারার সামনে দিয়ে বিশাল কোনো বস্তু (যেমন গ্রহ) অতিক্রম করে, তখন সেই তারার আলো কিছুটা বাঁকা হয়ে উজ্জ্বলতাও বাড়ে। ঠিক এই পরিবর্তন বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেন, সেখানে এক অদৃশ্য গ্রহ রয়েছে।

এই গ্রহটি বৃহস্পতির মতো আকারের গ্যাসীয় দৈত্য এবং এটি একটি ছোট, কম উজ্জ্বল M-বামন তারাকে কেন্দ্র করে ঘোরে। একবার কক্ষপথ ঘুরে আসতে এর সময় লাগে প্রায় ৪,১৭০ দিন, অর্থাৎ প্রায় ১১ বছর

২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা গাইয়া টেলিস্কোপ যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই গ্রহের ছায়ার অস্তিত্ব শনাক্ত করেন। যদিও গ্রহটি সরাসরি দেখা যায় না, এর প্রভাব ও ছায়া বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন—এটি একটি বাস্তব ও বিরল গ্রহ।

এই আবিষ্কার প্রচলিত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ধারণাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানায়। এতদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, গ্যালাক্সির কেন্দ্র বা প্রান্তে এই ধরনের বৃহৎ গ্যাসীয় গ্রহ তৈরি হওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু AT2021uey b’র উপস্থিতি সেই ধারনাকে ভুল প্রমাণ করেছে।

লিথুয়ানিয়ার গবেষক মারিয়ুস মাসকোলিউনাস বলেন, “এই পদ্ধতিতে সরাসরি বস্তু দেখা যায় না, কেবল ছায়া বোঝা যায়। এটা অনেকটা সেই পদ্ধতির মতো—যেখানে আকাশে উড়ে যাওয়া কোনো পাখির ছায়া দেখে বোঝা যায় সেটা চড়ুই, না রাজহাঁস!”

তিনি আরও জানান, এমন একটি ঘটনা শনাক্ত করা বিশাল ধৈর্যের বিষয়। কারণ, সবকিছু নির্ভর করে কখন একটি তারকা ও সম্ভাব্য মাইক্রোলেন্সিং বস্তু এক সরলরেখায় আসবে। এরপর বহু তথ্য বিশ্লেষণ করে আসল ঘটনাটি বের করতে হয়।

এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ছায়া বা আলো বিচ্যুতি বিশ্লেষণ করে আরও অনেক 'অদৃশ্য গ্রহ' শনাক্ত করা সম্ভব। এটি শুধু একটি নতুন গ্রহ নয়, বরং এক সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি—যা মহাবিশ্বকে জানার নতুন পথ দেখাচ্ছে।

Комментариев нет