close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি: চ্যালেঞ্জ, পরিবর্তন ও সম্ভাবনা..

IMTIUS H0SEN PATHAN avatar   
IMTIUS H0SEN PATHAN
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৪-এর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণপ্রদর্শন (উৎহিং​গনা) দেশের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গাকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক শক..

মূল পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

1. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। 

তার সরকার “গণতান্ত্রিক সংস্কার” এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনকে অগ্রাধান দিচ্ছে।

 

2. জুলাই সনদ (July Charter)

“জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” নামে একটি সংস্কার চুক্তি তৈরি করা হয়েছে, যাতে সংবিধান, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক কাঠামোর সুষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। 

এই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:

প্রধানমন্ত্রী-এর মেয়াদসীমা নির্ধারণ

সংসদীয় কাঠামোর পরিবর্তন (দ্বিঘাতিক সংসদ) 

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি

নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো

স্বায়ত্তশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদার করা 


১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গনতান্ত্রিক গণভোট (রেফারেনডাম) একই দিনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission, NCC) চর্টার বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করেছে যে নির্বাচন পরবর্তী সংসদকে “সংবিধান সংস্কার কাউন্সিল” হিসেবে গঠন করা হোক, এবং তারা ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো পাস করতে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় করা হবে। 

 

3. রাজনৈতিক শক্তির কাঠামোর পরিবর্তন

ঐতিহ্যবাহী দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ গভীর সংকটে রয়েছে: তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি, তাদের রাজনৈতিক কাজকর্মে নিষিদ্ধতার ঘটনা ঘটেছে। 

ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর (যেমন জামায়াত) ভূমিকা নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে: তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। 

ছাত্ররাজনীতি এবং সামাজিক আন্দোলনগুলি পুরাতন রাজনৈতিক কাঠামোর বাইরে স্বাধীন শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। 

 

4. গণতন্ত্র ও শাসন সংকট

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি বড় উদ্বেগ হলো: গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। প্রফেসর খালিদুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে “গণতন্ত্রের সংকট ও বিভ্রান্তির রাজনীতি” চলছে। 

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব সই করা হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভাজন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। 

 

5. আইনি ও বিচারসংক্রান্ত ইস্যু

প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ” স্বাক্ষর করেছেন, যা রেফারেনডাম এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের কাঠামো নির্ধারণ করছে। 

NCC-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী, নতুন “উচ্চ সংসদ” (সেনেট) গঠন করা হতে পারে, এবং বিচার বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাস করা হবে। 

 

6. সামাজিক ও তরুণ শক্তি

ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন ২০২৪ সালে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিল এবং তা রাজনৈতিক সংস্কারের চাহিদাকে উস্কে দিয়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম সক্রিয়: অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। 

 

 

---

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি

রাজনৈতিক প্রভাব বনাম বাস্তব সংস্কার: কালিন রাজনৈতিক চুক্তি হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা থাকতে পারে — রাজনীতিবিদদের স্বার্থ, পারস্পরিক সন্দেহ এবং সাংবিধানিক বাধা এগুলোর কারণ হতে পারে।

গণভোটের জটিলতা: রেফারেনডামে একটি “প্যাকেজ কিউশান” রাখার প্রস্তাব আছে — মানে ভোটাররা একসাথে সব প্রস্তাবে “হ্যাঁ” বা “না” বলবেন। এটি বিতর্কে রয়েছে কারণ সব প্রস্তাব সমানভাবে সমর্থনযোগ্য নাও হতে পারে। 

সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: গত আন্দোলন এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সহজে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।

সংস্থাগত স্থায়িত্ব: অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোতে, একটি স্থায়ী এবং সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সময় ও রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে।

 

---

সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পথ

গভীর রাজনৈতিক সংস্কার: যদি জুলাই সনদ সফলভাবে প্রয়োগ হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গঠনগতভাবে পরিবর্তন করতে পারে — ক্ষমতার বিভাজন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধি শাসন, এবং স্থিতিশীলতা আনার পথ খুলতে পারে।

নতুন রাজনৈতিক শক্তি: ছাত্র-শক্তি, তরুণ ভোটার এবং নতুন রাজনৈতিক দল (বা সংস্থা) ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: একটি সুনির্দিষ্ট রেফর্ম প্যাকেজ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

সংবিধানগত স্থায়ীত্ব: আগামী সংসদ যদি সফলভাবে সংবিধান সংস্কার করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়া যেতে পারে।

উপসংহার

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় রয়েছে — শুধুমাত্র ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতির পরিবর্তে সংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে দেশ এগোচ্ছে। যদিও চ্যালেঞ্জ অনেক আছে (রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বাস্তবায়নের ঝুঁকি, সহিংসতার আশঙ্কা), কিন্তু যদি পরিকল্পনা সফল হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি “নতুন অধ্যায়” শুরু করার সুযোগ হতে পারে — যেখানে গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আরও মজবুত হবে।

IMTIUS H0SEN PATHAN
IMTIUS H0SEN PATHAN 11 days ago
সাবাই শেয়ার করে পাশে থাকবেন
0 0 Reply
Show more


News Card Generator