close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বর্ষবরণে ছাত্রলীগ কর্মীর উপস্থাপনা ঘিরে সমালোচনার ঝড়! এসিল্যান্ড বললেন: "সংবাদ হলে কী হবে?"..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নাসিরনগরে উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্মীকে উপস্থাপকের দায়িত্ব দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লেও এসিল্যান্ডের হালকা প্রতিক্রিয়া ঘিড়ে প্র..

বর্ষবরণে ছাত্রলীগ কর্মীর উপস্থাপনা ঘিরে বিতর্ক: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, এসিল্যান্ড বললেন ‘কিছুই হবে না’

নববর্ষ মানেই উৎসবের আমেজ, প্রাণের স্পর্শ। কিন্তু সেই আমেজ যখন প্রশাসনিক আয়োজনে রাজনৈতিক বিতর্কের রূপ নেয়, তখন জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়—এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে চলছিল নানা প্রস্তুতি। স্থানীয় প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে অনুষ্ঠানটি শুরু হলেও এক পর্যায়ে দেখা যায়, উপস্থাপক হিসেবে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী দিদার হোসেন। শুরু হয় ফিসফাস, আর মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দিদারের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার ভিডিও। অভিযোগ উঠেছে, এই কর্মীকে উপস্থাপক করা হয়েছে ব্যক্তিগত পছন্দে—আর সেই পছন্দের নেপথ্যে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও বর্ষবরণ কমিটির আহ্বায়ক ইমরান হোসাইন শাকিল।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, সরকারি প্রশাসনের আয়োজনে রাজনৈতিক কর্মীর উপস্থাপনা কীভাবে অনুমোদন পায়? সাধারণ মানুষ তো বটেই, স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠন থেকেও এসেছে সমালোচনার ঝড়।

প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও সংক্ষিপ্ত করা অনুষ্ঠান

এই ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় দিদার হোসেনের ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল ও সভায় অংশ নেওয়ার ভিডিও। অনেকে প্রশ্ন তোলেন—উপজেলা প্রশাসনের মতো একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কীভাবে এমন রাজনৈতিক পরিচয়ের মানুষকে উপস্থাপনায় দেওয়া হলো?

সমালোচনার মুখে অবশেষে ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন শাকিল জানান, “আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। পরে ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নিই তাকে সরিয়ে দেওয়ার।”

তবে ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রশ্ন তুলতেই ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ারের কাছ থেকে। তিনি স্পষ্টতই বলেন, “সংবাদ হলে কী হবে? কিছুই হবে না।” সাংবাদিকদের প্রতি তার এই রুক্ষ ভঙ্গি আরও বিতর্কের জন্ম দেয়।

জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আশ্বাস

ঘটনার ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখবো। কেউ যদি কোনো অনিয়ম করে থাকে, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাছরিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ার, কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন শাকিল, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহিমুল আরেফিন, শিক্ষা কর্মকর্তা ইসহাক মিয়া, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হান্নানসহ বহু শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সামাজিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বার্তা

এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি উপস্থাপক নির্বাচন নয়—এটি রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং রাষ্ট্রীয় আয়োজনে নৈতিক অবস্থানের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। যেখানে একজন ছাত্রলীগ কর্মী সরাসরি মঞ্চে উঠে আসেন, আর প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, "কিছুই হবে না"—সেখানে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন জোরালোভাবেই উঠে আসে।

জনগণের মধ্যে একটাই প্রশ্ন—এই দায় কার? এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

No se encontraron comentarios