close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, অভ্যুত্থান আন্দোলনের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক চাপের কারণে নিজেকে আলাদা করেছেন।..

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসা উমামা তার পোস্টে লিখেছেন, গত কয়েক মাস ধরে চলমান রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চাপের কারণে তিনি আর এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারছেন না।

ফেসবুক পোস্টে উমামা লিখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গত পরশু অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানে শেষ হলো। যদিও আমি সরাসরি পদত্যাগ করিনি, তবে গত কয়েক মাস ধরে আমি কার্যত এই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।

তিনি উল্লেখ করেন, এনসিপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পর বিভিন্ন অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য এই ব্যানার নিয়ে কাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে দলীয় অন্তরায় ও রাজনৈতিক চাপের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ায় তিনি তার ওপর প্রচুর অনলাইন এবং অফলাইন চাপের মুখে পড়েন।

“আমি ভালো ইচ্ছার সঙ্গে প্ল্যাটফর্ম সচল রাখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মাঝে মাঝেই একই দলের কিছু সদস্যের Juniors দের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। যারা এক সময় পাশে ছিল, তারা হঠাৎ করেই সুবিধাবাদী হয়ে ওঠে, আমাকে ব্যবহার করার পর ছুড়ে ফেলার মতো আচরণ করেছে,” লিখেছেন উমামা।

তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন শাখা কমিটিতে অনেক ভালো মানুষ ছিল যারা পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু সেই ভালো ইচ্ছার মানুষরাও সুবিধাবাদীদের কাছে পরাজিত হয়েছে। আমি এখনও ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখি এবং সাহায্য করি।”

উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের মতো বড় আন্দোলনের পর যখন তিনি এই পরিস্থিতি দেখেন, তখন তার জন্য খুব কঠিন ছিল। তিনি তার বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত গৃহীত করেন।

“আমি পদত্যাগ করতে চাইছিলাম বহুবার, কিন্তু পারিনি। রাজনৈতিকভাবে পদত্যাগ করাটাই সবচেয়ে সহজ ছিল। তবে আমি দেশ সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম, কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে আসিনি,” উমামা উল্লেখ করেছেন।

তিনি আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ অনিয়মের বিষয়েও খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। কমিটি গঠনে অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ তিনি তুলে ধরেছেন এবং বলেন, “কমিটির বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমি সরাসরি সাবেক আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে অবজেকশন জানিয়েছি, কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি।”

মুখপাত্র হিসেবে তার দায়িত্ব থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ নিয়ন্ত্রণ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। উমামা লিখেছেন, “পেইজ থেকে আমার বিরুদ্ধে পোস্ট করা হয়, আমি ব্যবস্থা নিতে চাইলে সেটাকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২০২৩ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে এই পরিস্থিতি আমাকে মানসিকভাবে অনেক দুর্বল করে দেয়।”

তিনি আরও জানান, “মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখি যারা সত্যিকারভাবে কাজ করতে চায়, তারা নিজেদের দাবিতে ধোঁকা পাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরেও অনেক অবিচার ও দুর্নীতি লক্ষ্য করেছি। এই অবস্থায় আমি দলের সঙ্গে আর থাকতে চাই না।”

উমামা ফাতেমার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, তিনি এ আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে প্রায় পুরোপুরি আলাদা করেছেন, যদিও সরাসরি পদত্যাগ করেননি। তিনি নতুন করে তার শিক্ষার্থী পরিচয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং ব্যক্তিগত ভাবে অন্য দিক থেকে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করার কথা ভাবছেন।

“আমি চাই সবাই পড়াশোনায় মনোযোগ দিক, কাজের প্রতি নিষ্ঠা বজায় রাখুক। আমি নিজেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি, বরং গুছিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

উমামা ফাতেমার এই পদত্যাগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। আন্দোলনের একাংশ মনে করছে, তার মতো নেতৃত্ব ছাড়া আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে, অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে এর গতিধারা ব্যাহত হয়েছে।

উমামার পদত্যাগ এই সংকটকে আরও প্রকট করেছে এবং এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে আন্দোলন কতটা শক্তিশালী হয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে।

No comments found