নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় যৌথবাহিনীর চমকপ্রদ অভিযানে ধরা পড়েছে এক নারী মাদক কারবারি। শুধু মাদক নয়—বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে ভয়ংকর সব দেশীয় অস্ত্রও। অভিযানে ধরা পড়েছে ২০ বছর বয়সী মুনা, যার নেতৃত্বেই চলছিল এই চক্র। গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে গেছে তার স্বামী রাব্বি ও আরও চার সহযোগী।
রোববার গভীর রাতে বন্দরের সোনাকান্দা এলাকার একটি ভাড়াটিয়া বাসায় অভিযান চালায় যৌথবাহিনীর একটি দল। সেনাবাহিনী ও পুলিশ একসঙ্গে অংশ নেয় এই বিশেষ অভিযানে। স্থানীয়দের চোখে মুখে এখনো আতঙ্কের ছাপ—এতো বড় অস্ত্র ও মাদকের চালান তাদের পাশের বাসায়!
অভিযানের নেপথ্যে
বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আঃ মোতালেব ভুঞা জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, বাবুল হোসেনের মালিকানাধীন একটি ভাড়া বাসায় মাদক কারবার চলছে পুরোদমে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যৌথ অভিযান চালানোর।
রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে ফেলেন সোনাকান্দার সেই বাড়িটি। তবে উপস্থিতি টের পেয়ে আগেই কৌশলে পালিয়ে যায় মুনার স্বামী রাব্বি ও তার চার সহযোগী।
গ্রেফতার ও উদ্ধার অভিযান
তবে পালাতে পারেননি রাব্বির স্ত্রী মুনা। তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর শুরু হয় ঘর তল্লাশি—আর তখনই বেরিয়ে আসে ভয়ংকর চিত্র।
বাসার ভেতরে মজুদ ছিল বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, যার মধ্যে ছিল:
পাতের তৈরি বিশাল আকৃতির তলোয়ার
ধারালো স্টিলের চাকু
দেশীয় কায়দায় তৈরি চাইনিজ কুড়াল
আরও বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক অস্ত্র
মাদকের তালিকাও ছোট নয়। যদিও কত পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানানো হয়নি, তবে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী "বিপুল পরিমাণ" ছিল। এমনকি স্থানীয়ভাবে গুজব ছড়িয়েছে, এই মাদক গুদাম নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ হতো।
চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে
ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিবেশীদের ভাষ্য, তারা কখনো কল্পনাও করেননি যে পাশের ঘরেই এমন ভয়ংকর কাজ হচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “ওই বাসায় মাঝে মাঝে অচেনা লোকজন যাতায়াত করতো, কিন্তু আমরা ভাবিনি যে মাদক ও অস্ত্রের গুদাম হতে পারে।”
পালিয়ে যাওয়া আসামিদের ধরতে অভিযান
পুলিশ জানিয়েছে, রাব্বি ও তার সহযোগীদের ধরতে ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই চক্রের শিকড় আরও গভীরে বিস্তৃত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
আইনি পদক্ষেপ ও পরবর্তী কার্যক্রম
এ ঘটনার পরপরই বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুনাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, যাতে এই চক্রের মূল হোতাদের নাম বের করে আনা যায়।
নারায়ণগঞ্জে নারী নেতৃত্বে এমন মাদক ও অস্ত্র চক্র খুব একটা দেখা যায় না। এই ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। এলাকার মানুষ এখন একটাই প্রশ্ন করছে—আর কে কোথায় এমন ভয়ংকর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে?