দেশজুড়ে আলোচিত এবং একইসঙ্গে সমালোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম, যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত, এবার শিরোনামে উঠে এসেছেন এক মর্মান্তিক ঘটনায়। বগুড়ার ধুনট উপজেলার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের মাঝে তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছে।
প্রাথমিক তথ্যমতে, শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে হিরো আলমকে অচেতন অবস্থায় ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার বন্ধুই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের তৎপরতায় তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, পুরো বিষয়টি ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (রাত ৩টার দিকে) হিরো আলম ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত ভান্ডারবাড়ি গ্রামের নাট্যকার জাহিদ হাসান সাগরের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানেই একান্ত সময় কাটানোর আশায় তিনি অবস্থান নেন।
রাতের খাবারের পর দুই বন্ধুর মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়—মূলত আলোচনার বিষয় ছিল রিয়া মনি নামের এক তরুণী, যাকে নিয়ে হিরো আলম একসময় ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বন্ধুর কাছে নিজের একাকীত্ব, দুঃখবোধ ও মানসিক ক্লান্তির কথা খুলে বলেন তিনি।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বন্ধু জাহিদ হাসান সাগর ঘুম থেকে উঠলেও হিরো আলম তখনও ঘুমিয়ে ছিলেন। কয়েকবার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর বিছানায় গিয়ে দেখতে পান হিরো আলমের বালিশের পাশে একটি ঘুমের ওষুধের পাতা পড়ে আছে, যার বেশ কিছু ট্যাবলেট খালি।
তাৎক্ষণিকভাবে তিনি হিরো আলমকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান জানান, "রোগী ঘুমের ওষুধ সেবনের পর এখানে আসে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে চাইলেও তার সঙ্গে থাকা লোকজন তা মানতে চাননি। তবে আপাতত তার জীবন বিপদের বাইরে।
তবে চিকিৎসক আরও জানান, রোগীর আচরণে স্পষ্টভাবে মানসিক চাপ ও হতাশার ছাপ পাওয়া গেছে। সাইকোলজিক্যাল কেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
জাহিদ হাসান সাগর বলেন, “আলম আমার কাছে এসেছিল একটু শান্তির আশায়। ও বলছিল, যেখানে যায়, সবাই ওকে প্রশ্ন করে, বিরক্ত করে। ও চায়ছিল কিছু সময় নিরিবিলি কাটাতে। রিয়া মনিকে না পাওয়ার কষ্টটা তার মনে খুব বেশি গভীর। আমার ধারণা, সেই হতাশা থেকেই সে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর সামাজিক সংকেত—সমাজের চোখে বিতর্কিত বা ব্যতিক্রমী মানুষরা কতটা একা, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? জনপ্রিয়তা থাকলেও হিরো আলমের মতো কেউ যদি অবসাদে ভোগেন, তাহলে এর চেয়েও দুর্বল মানসিক অবস্থানে থাকা মানুষদের জন্য পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে—তা ভাবনার বিষয়।
হিরো আলম আপাতত শঙ্কামুক্ত হলেও তার এই আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরছে সমাজে বেড়ে চলা মানসিক অসুস্থতা, প্রেমে ব্যর্থতা, এবং নিঃসঙ্গতার জটিল বাস্তবতা। সমাজ কি প্রস্তুত এই মানুষগুলোকে বোঝার জন্য? নাকি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেই আমরা ব্যস্ত থাকবো?