রাজপথে বিচারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখ হারান চার যুবক। সেই যন্ত্রণার শেষ হয়নি এখনও। বরং তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয় যখন তারা রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বিষপান করেন। পরবর্তীতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়।
সোমবার (২৬ মে) সকালে একটি নতুন নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনাটি। বিষপানে আক্রান্ত চার তরুণ কাউকে কিছু না জানিয়েই হাসপাতাল থেকে নিরুদ্দেশ হন। পরে জানা যায়, তারা আন্দোলনে যোগ দিতে গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সিনিয়র নার্স নন্দিতা রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “তারা আমাদের কিছু না বলেই চলে গেছেন।"
৫২৬ নম্বর কক্ষের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জায়েদ হোসেন বলেন, “তাদের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিল। আমরা আরও একদিন পর্যবেক্ষণে রেখে ছাড়পত্র দেওয়ার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু তার আগেই তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।”
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চার জনের মধ্যে প্রথমে দুইজন গোপনে চলে যান আন্দোলনে যোগ দিতে। পরবর্তী দুইজনও জানান যে তারা যাচ্ছেন রাজপথে, বাকিরা আগে চলে গেছে। যদিও তারা বলেছিলেন আন্দোলন শেষে ফিরে আসবেন, তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা ফেরেননি।
পূর্বঘটনা অনুযায়ী, রবিবার (২৫ মে) দুপুরে পুনর্বাসনসহ দুটি দাবির পক্ষে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এই চার তরুণ—শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (আবু তাহের)—চোখের চিকিৎসা নিতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন।
তারা জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে দাবি জানাতে চান। কিন্তু সিইও তাদের অপেক্ষা করতে বললে, তারা সেখানে ক্ষুব্ধ হয়ে কক্ষে বসেই বিষপান করেন। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত। কিন্তু হাসপাতাল ত্যাগ করে আবার আন্দোলনে ফেরায় চিকিৎসা ও নিরাপত্তা উভয়ই ঝুঁকিতে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই ঘটনা শুধু চার তরুণের জীবননাশের আশঙ্কা তৈরি করেনি, বরং হাসপাতালের নিরাপত্তা ও রোগীর মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখ হারানোর পর পুনর্বাসনের দাবি যেমন মানবিক, তেমনি এভাবে বিষপান করে নিজেদের জীবন বিপন্ন করাও রাষ্ট্রীয় উদাসীনতারই প্রতিবিম্ব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় অবহেলার নিদর্শন বলে দাবি করেছে।
বর্তমানে প্রশ্ন একটাই—চার তরুণের এই জীবনবাজি রেখে রাজপথে ফেরা কি কোনো বড় বিস্ফোরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে?