সৌদি আরবের বিশাল জ্বালানি বিজয়: ১৪টি নতুন খনি আবিষ্কারের ঘোষণা
বিশ্বব্যাপী যখন জ্বালানি সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তখন ঠিক এই সময়েই সৌদি আরব এক বিশাল চমক নিয়ে হাজির হলো। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান ঘোষণা করেছেন, সৌদি আরব পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ও বিখ্যাত ‘এম্পটি কোয়ার্টার’ অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের ১৪টি নতুন খনি আবিষ্কার করেছে।
এই ঘোষণাটি এসেছে এমন একটি সময়ে, যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্থির এবং জ্বালানি উৎপাদন ঘিরে চলছে নানা ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন। সৌদি সরকারের মতে, এই খনি আবিষ্কার দেশটির জ্বালানি খাতে নেতৃত্বকে আরও জোরালো করবে এবং ‘ভিশন ২০৩০’-এর বাস্তবায়নে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
কোন কোন খনি ও কী পরিমাণ সম্পদ মিলেছে?
আবিষ্কৃত নতুন উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে—
-
৬টি নতুন তেলের খনি
-
২টি তেলের রিজার্ভার
-
২টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র
-
৪টি গ্যাস রিজার্ভার
তেল উৎপাদনে চমক:
সৌদি আরবের পূর্ব প্রদেশে জাবু-১ কূপ থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ৮০০ ব্যারেল হালকা অ্যারাবিয়ান ক্রুড তেল।
সায়াহিদ-২ কূপ থেকে মিলছে ৬৩০ ব্যারেল, আর আইফান-২ কূপ থেকে প্রতিদিন উঠছে ২,৮৪০ ব্যারেল হালকা তেল ও ০.৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
জুবাইলা রিজার্ভারে বেরি-৯০৭ কূপ থেকে মিলছে ৫২০ ব্যারেল তেল এবং ০.২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এছাড়া মাজালিজ ক্ষেত্রের ম্যাজালিজ-৬৪ কূপ থেকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে ১,০১১ ব্যারেল প্রিমিয়াম লাইট ক্রুড ও ০.৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এম্পটি কোয়ার্টারেও দারুণ সফলতা
সৌদি আরবের বিখ্যাত ‘এম্পটি কোয়ার্টার’ বা আর রুব আল খালি অঞ্চলও এবার জ্বালানি সাফল্যে পিছিয়ে নেই। নুয়াইর-১ কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলন হচ্ছে ১,৮০০ ব্যারেল মাঝারি মানের তেল এবং ০.৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
ডামদা-১ কূপে, মিশরিফ-সি ও ডি রিজার্ভার থেকে মিলেছে যথাক্রমে ২০০ এবং ১১৫ ব্যারেল তেল। কুরকাস ক্ষেত্র থেকেও পাওয়া যাচ্ছে ২১০ ব্যারেল তেল।
প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ময়কর সাফল্য:
প্রাকৃতিক গ্যাসের দিকেও এসেছে বড় অর্জন।
গিজলান ক্ষেত্রের উনাইযাহ বি/সি রিজার্ভারে গিজলান-১ কূপ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং ২,৫২৫ ব্যারেল কনডেনসেট।
আরাম ক্ষেত্রের আরাম-১ কূপ থেকে মিলছে ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং ৩,০০০ ব্যারেল কনডেনসেট।
এছাড়া মিহওয়াজ-১৯৩১০১ কূপ থেকে পাওয়া গেছে ৩.৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ৪৮৫ ব্যারেল কনডেনসেট।
মারজুক ক্ষেত্রের আরব-সি, আরব-ডি ও আপার জুবাইলা রিজার্ভার থেকেও প্রতিদিন উত্তোলিত হচ্ছে মোট ২১ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস।
ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলা সৌদি আরব
জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বলেন, “এই আবিষ্কারগুলো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল সম্ভাবনাকে সামনে এনে দিয়েছে। এটি শুধু সৌদি আরবের নয়, গোটা বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
তিনি আরও বলেন, “এই আবিষ্কারগুলো অর্থনীতিকে বেগ দেবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।”
এই বিশাল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সৌদি আরব আবারও প্রমাণ করলো—বিশ্ব জ্বালানি মানচিত্রে তারা শুধু উপস্থিত নয়, বরং নেতৃত্বে।



















