ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্রে বিস্ফোরণ! হামলার নেপথ্যে ইরানকে দায়ী করে 'চূড়ান্ত জবাবের' হুমকি নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন হামলার মুখে পড়েছে। রবিবার (৪ মে) ভোরবেলা এক বিস্ময়কর ঘটনার জন্ম দেয় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তারা ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্র লক্ষ্য করে ছোঁড়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার একটি সরাসরি বেন গুরিয়নের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনায় শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বিস্ফোরক হামলা
স্থানীয় সময় সকালবেলায় সাইরেন বেজে ওঠার পরপরই রাজধানী তেলআবিব এবং আশেপাশের অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের আশেপাশে এসে পড়ে। এটি ইসরায়েলের অন্যতম কৌশলগত স্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক সংযোগস্থল হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানায়, তারা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করার জন্য চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। এই ব্যর্থতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে।
নেতানিয়াহুর কড়া প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক তীব্র বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন—
"এই হামলার নেপথ্যে শুধু ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা নয়, তাদের পেছনে থাকা ইরানও সমানভাবে দায়ী।"
নেতানিয়াহু আরও বলেন, "আমরা শুধু হুতিদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের মদদদাতা ইরানকেও উপযুক্ত জবাব দেব। এই হামলার জন্য তারা চরম মূল্য দেবে।"
তিনি এই প্রতিশোধের বিষয়টি শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এমন স্পষ্ট অবস্থান এবং ইরানকে প্রকাশ্যে হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরণের যুদ্ধের ইঙ্গিত দিতে পারে। এর আগে ইসরায়েল-ইরান সম্পর্ক বরাবরই উত্তপ্ত ছিল, কিন্তু সরাসরি বিমানবন্দর আক্রমণ এবং ইরানকে দায়ী করা নতুন করে সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও, ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দ্রুত নড়াচড়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। পেন্টাগন ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত বিশেষ সামরিক ইউনিটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেহুতিদের হামলা ও ইরান সংশ্লিষ্টতা
হুতি বিদ্রোহীরা ইতিপূর্বে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও একাধিকবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এবার তারা সরাসরি ইসরায়েলের কৌশলগত স্থাপনা লক্ষ্য করায় এটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও সামরিক দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হুতিদের এই হামলা ইরানের সরাসরি নির্দেশে হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। যদিও ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় স্বীকার করেনি।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—নেতানিয়াহুর "চরম মূল্য" দেওয়ার ঘোষণার বাস্তবায়ন কেমন হবে? ইসরায়েল কি সরাসরি ইয়েমেনে বা ইরানে হামলা চালাবে? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি বড় আকারের যৌথ সামরিক অভিযানে নামবে?
বিশ্ব রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তৃতীয় পক্ষ যেমন—লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকি মিলিশিয়া, এমনকি সিরিয়াও যুক্ত হতে পারে। যা একটি পূর্ণমাত্রার মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
বেন গুরিয়নে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত এবং নেতানিয়াহুর দৃঢ় হুঁশিয়ারি মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এখন পুরো বিশ্বের নজর ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। শান্তি না প্রতিশোধ—এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে আসন্ন দিনগুলো।