বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। কিন্তু আপনি কি জানেন—বিল গেটস হতে পারতেন ইতিহাসের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার? হ্যাঁ, এক লাখ কোটি ডলারেরও বেশি সম্পদের মালিক হতে পারতেন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। কিন্তু কী এমন ঘটেছিল যে, সেই অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হলো না তাঁর?
সম্প্রতি মার্কিন বিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস তাদের একটি বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে—বিল গেটস যদি তাঁর মাইক্রোসফটের শেয়ারগুলো ধরে রাখতেন এবং দান-সহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজে সেই বিপুল অর্থ ব্যয় না করতেন, তাহলে আজকের দিনে তিনিই হতেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের অধিকারী।
১৯৮৬ সালে যখন মাইক্রোসফট প্রথমবারের মতো শেয়ারবাজারে প্রবেশ করে, তখন বিল গেটসের হাতে ছিল ১ কোটি ১২ লাখ শেয়ার। তখন তিনি মাইক্রোসফটের প্রায় ৪৯ শতাংশ মালিক। সে সময় এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২০ কোটি ডলার। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শেয়ার বিক্রি, দান এবং অংশীদারিত্ব হ্রাস করতে করতে এখন তাঁর হাতে আছে মাত্র ০.৯ শতাংশ শেয়ার।
ফোর্বসের হিসেবে, যদি বিল গেটস তাঁর শেয়ারগুলো বিক্রি না করতেন এবং শুধু এগুলো ধরে রাখতেন, তাহলে আজ তার বাজারমূল্য হতো প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার! শুধু তাই নয়, এই শেয়ারের উপর পাওয়া লভ্যাংশ হিসেবেও তিনি অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার পেতেন—যা এককভাবে তাঁকে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক বানিয়ে দিত।
কেন তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করলেন? তার উত্তর মিলেছে তাঁর কর্মমন্ত্রে—মানবতার কল্যাণে কাজ করা। ২০০০ সালে বিল ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তাঁরা দারিদ্র্য, সংক্রামক রোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছেন।
শুরুর দিকে তারা ৬০.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এখন সেই অংক আরও বেড়েছে। গেটস ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী দুই দশকের মধ্যে তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশই দান করে দেবেন। আর তাই ক্রমেই তাঁর মাইক্রোসফট শেয়ারের অংশীদারিত্ব কমে এসেছে।
ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড দীর্ঘস্থায়ী করলেও, বিল গেটসের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি নয়। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে এই ফাউন্ডেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে তার আগেই তিনি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, ভ্যাকসিন উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে চান।
গেটসের এই জীবনচিত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শুধুমাত্র অর্থ নয়, সমাজের উপর প্রভাব ফেলাই হতে পারে একজন ধনী ব্যক্তির সত্যিকারের অর্জন। তিনি যদি চাইতেন, বিশ্বের শীর্ষ ধনীর মুকুট তাঁর মাথাতেই থাকত। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছেন অন্য পথ—যেখানে অর্থ নয়, মানবতার জয়গান গাওয়া হয়।
বিল গেটসের এই অসাধারণ সিদ্ধান্ত আমাদের দেখায়, কিভাবে একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা শুধু অর্থের পেছনে না ছুটে, মানবতার কল্যাণে বিশ্বজুড়ে ইতিহাস গড়তে পারেন। তিনি ট্রিলিয়ন ডলার না পেলেও, কোটি মানুষের দোয়া তাঁর সম্পদের চেয়েও বহুগুণ বেশি মূল্যবান।