close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস! জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড়

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে কী পরিকল্পনা করেছিলেন, তা নিয়ে জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে কী পরিকল্পনা করেছিলেন, তা নিয়ে জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ১১৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেনেভা থেকে প্রকাশ করেছে। এতে উঠে এসেছে বিক্ষোভ দমনে নেওয়া কৌশল, সরাসরি মনিটরিং এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া নির্দেশনার চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘হেভি ইউনিট’ নামিয়ে বিক্ষোভ দমনের পরিকল্পনা জাতিসংঘের তদন্ত দলকে দেওয়া এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন, যদি ‘হেভি ইউনিট’ মোতায়েন করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র ‘জিহাদিরা’ রাস্তায় থাকবে, আর সাধারণ বিক্ষোভকারীরা ভয় পেয়ে ঘরে ফিরে যাবে। এই ধারণার ভিত্তিতেই তিনি নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখতেন এবং বিক্ষোভ মোকাবিলার নির্দেশ দিতেন। জাতিসংঘের তদন্ত দল বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন কল লগ বিশ্লেষণ করেছে। তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সরাসরি শেখ হাসিনাকে রিপোর্ট করত। প্রতিদিন বিক্ষোভ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি হালনাগাদ তথ্য পেতেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতেন। গোপন বৈঠকে সেনা, বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। সেখানে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে কারফিউ জারি করা হবে। ওইদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে মোতায়েন থাকবে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা হবে। ঢাকার প্রবেশপথ বন্ধের পরিকল্পনা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ঢাকায় প্রবেশপথগুলো সাঁজোয়া যান দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং পুলিশের ওপর দায়িত্ব থাকবে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ঢাকায় ঢোকার সমস্ত পথ আটকে দেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট সকাল ও রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার অনুলিপি পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। প্রথম বার্তায় আন্দোলনকারীদের কিছু নির্দিষ্ট রুট ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়, আর দ্বিতীয় বার্তায় বিক্ষোভকারীদের প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করার কৌশল শেয়ার করা হয়। ‘সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না’ – শেখ হাসিনাকে ফোন জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ আগস্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জানান যে, পরিস্থিতি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে না। তবে কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর নতুন আলোচনা জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় বিক্ষোভ দমন করতে যে কঠোর পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা এখন প্রকাশ্যে আসায় নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে এবং এই প্রতিবেদন ঘিরে নতুন কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
نظری یافت نشد