close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ..

Akram Hossen avatar   
Akram Hossen
শিক্ষা খাতের সংকট ও সংস্কার প্রয়োজনীয়তা
মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব
জঙ্গিবাদ ও মাদ্রাসা শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা
সংস্কার সফল হবে কি?..

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত হয়ে আসছে। বিশেষত মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন নিয়ে নানা বিতর্ক ও জিজ্ঞাসা রয়েছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার ঘোষণা দিয়েছেন যে, মাদ্রাসায় বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘মাদ্রাসা শিক্ষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বিগত সরকার শিক্ষাখাতে বিপুল দুর্নীতি করেছে এবং তা বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। তিনি দাবি করেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে এবং এই সংকট কাটিয়ে তুলতে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

বিগত বছরগুলোতে শিক্ষা খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগসহ নানা সমস্যা শিক্ষার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টার এই বক্তব্য শিক্ষাঙ্গনে সংস্কার ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কিছু মৌলিক সাধারণ শিক্ষার বিষয় পড়ানো হয়। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলক কম। শিক্ষা উপদেষ্টার মতে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শুধু ধর্মীয় জ্ঞান দিলেই চলবে না, তাদের সমাজ ও বাস্তব জীবনের জন্যও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত হলে মাদ্রাসার ছাত্ররা আধুনিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে এবং মৌলিক চিন্তা ও গবেষণায় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, অতীতে কিছু নির্দিষ্ট পোশাকের কারণে অনেককে ‘জঙ্গি’ সাজানো হয়েছে, যা অন্যায় ছিল। তিনি আরও বলেন, কোনো পেশায় খারাপ মানুষ থাকতেই পারে, কিন্তু তা বলে পুরো মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদ ইস্যুতে মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে বিতর্ক হয়েছে। তবে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সাধারণ ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় এবং তাদের বড় অংশ সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়। ফলে মাদ্রাসাগুলোতে অপরাধ হলে সেটার নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করা যাবে না।

মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বাস্তবায়ন সহজ নয়। বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মাদ্রাসা রয়েছে, যার মধ্যে কওমি, আলিয়া ও স্বতন্ত্র মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাদানের পদ্ধতি ভিন্ন।

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে—

  1. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই – মাদ্রাসার অনেক শিক্ষকের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
  2. পরিকাঠামোর অভাব – অধিকাংশ মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত ল্যাব, বিজ্ঞান সরঞ্জাম ও ডিজিটাল লার্নিং সুবিধা নেই।
  3. সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিরোধ – অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান যুক্ত করতে দ্বিধান্বিত হতে পারে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাস্তবায়ন করা গেলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে বেড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ পাবে।

মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হলে এটি বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটি সফল করতে হলে পরিকল্পিত বাস্তবায়ন, সঠিক প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কেবল ধর্মীয় জ্ঞানেই নয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য এবং কত দ্রুত কার্যকর করা যায়।

No comments found


News Card Generator