close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিএনপি নেতার গুদাম থেকে ১৩৫১৫ কেজি চাল উদ্ধার করল সেনাবাহিনী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঈদে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি চাল নিজের গুদামে অবৈধভাবে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌর বিএনপি সভাপতি খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীর হঠাৎ অভিযানে গুদাম থেকে উদ্ধার হয় ১৩ হা..

নেত্রকোণার কেন্দুয়া শহরজুড়ে শনিবার সকাল থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে একটিই নাম—খোকন আহমেদ। কেন্দুয়া পৌর বিএনপির সভাপতি হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি এখন আলোচনায় ‘সরকারি চাল চোর’ হিসেবে। ঈদ উপলক্ষে গরিব ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ভিজিএফ চাল গোপনে মজুদ করে রাখার অভিযোগে তার মালিকানাধীন একটি গোডাউনে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

গত শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী কেন্দুয়ার ‘বাদে আঠারো বাড়ি’ এলাকায় অবস্থিত মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামের একটি গুদামে হঠাৎ অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকই বিএনপি নেতা খোকন আহমেদ (৫০)। অভিযানে সেখানে পাওয়া যায় এক অস্বাভাবিক চিত্র—গুদামে স্তূপ করে রাখা ৩০৪ বস্তা চাল, যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি। এসব চালের বাজারমূল্য প্রায় ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা

গুদামে অভিযান চালানোর সময় খোকন আহমেদ গা ঢাকা দেন। সেনাবাহিনীর একাধিকবার ফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তিনি মোবাইল বন্ধ করে দেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন মদন অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গুদামে হানা দিই। এ সময় খোকন আহমেদ গুদাম থেকে চাল সরাতে একটি হ্যান্ডট্রলি ব্যবহার করেন। ট্রলিটি বঙ্গানিয়া মোড়ে আটক করা হয় এবং পুনরায় গুদামে ফিরিয়ে আনা হয়। ট্রলিতে ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির লোগোযুক্ত বস্তা এবং বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিকের বস্তায় ভরা চাল।

গুদামের আশপাশে থাকা লোকজন দাবি করেন, এই চালগুলো সরকারি বিতরণ শেষে ‘বেঁচে যাওয়া অংশ’ যা অনুমতি নিয়ে কেনা হয়েছে। তবে সেনা কর্মকর্তারা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি। কারণ, অনুমতি নিয়ে কেনা হলে এত গোপনীয়তা, ট্রলিতে করে সরিয়ে নেওয়া, কিংবা সরকারের মূল বস্তাগুলো ব্যবহার করার যৌক্তিকতা কোথায়?

লেফটেন্যান্ট জামিউল বলেন, “যদি অনুমতি নিয়েই ক্রয় করা হয়ে থাকে, তাহলে এত গোপনে কেন? কেন খাদ্য বিভাগের সরকারি বস্তায় এসব চাল রাখা হয়েছে? আর কেনইবা পালিয়ে গেছেন মালিক?

অভিযানের সময় খোকন আহমেদের দুই সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও পরবর্তীতে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, “জব্দকৃত চাল উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে। প্রশাসন চাইলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার, যিনি ছুটিতে রয়েছেন, তিনি জানান, “ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছি। ফিরে এসে আমি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

ঘটনার পর থেকেই কেন্দুয়া পৌর শহরসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও এখনো কেন কোনো মামলা হয়নি? সরকারি চাল আত্মসাৎ করার মতো জঘন্য অপরাধের পরেও যদি রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ছাড়া পেয়ে যায়, তাহলে সাধারণ জনগণের অধিকার কোথায়?

স্থানীয় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, “গরিবের পেটে ছুরি মারা মানুষগুলো যদি ধরা না পড়ে, তাহলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব ঘটনায় কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

সরকারি সাহায্যের নামে বরাদ্দকৃত চাল যদি রাজনৈতিক নেতারা আত্মসাৎ করে, তাহলে সেই সাহায্য আর মানুষের কাছে পৌঁছায় না—যার ফলে ঈদ কিংবা দুর্যোগেও প্রকৃত সুবিধাভোগীরা থেকে যায় উপেক্ষিত। খোকন আহমেদের মতো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, শক্তিশালী আইন প্রয়োগ ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব নয়।

No comments found