বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই মিটারে ইউনিট বাড়ছে! পল্লী বিদ্যুতে 'অটো পালস' নামে ভয়ঙ্কর প্রযুক্তি কে'লে'ঙ্কা'রি ফাঁ'স..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও ডিজিটাল মিটারে বাড়ছে শত শত ইউনিট! পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীর বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিতে ফাঁস হলো 'অটো পালস' নামে চাঞ্চল্যকর প্রতারণা। লাখ লাখ গ্রাহক হচ্ছেন জালিয়াতির শিকার।..

গ্রামের সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা যখন প্রতিদিন হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তখন অজান্তেই তাঁদের মিটারে যোগ হচ্ছে শত শত ইউনিট। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে মিটার রিডিং। এই বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর বাস্তবতা সম্প্রতি ফাঁস করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী জানান, পল্লী এলাকায় নতুন ডিজিটাল মিটার বসানোর পর হঠাৎ করেই অনেক গ্রাহকের বিল অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে। এমনকি এমন কিছু মিটার আছে যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগই ছিল না, তবুও বিল উঠেছে হাজার ইউনিটেরও বেশি।

“আমি এক গ্রাহকের মিটার নিয়মিত দেখে আসতাম,” বলেন তিনি। “তার গড় ব্যবহার ছিল ৩০ ইউনিটের মতো। একবার গিয়ে দেখি মিটারে ৩০০ ইউনিট! জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, ‘আগেও যেমন চালাতাম এখনও তেমনই চালাই। নতুন কিছুই চালাই না।’ তখনই আমি বুঝি কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে।”

'অটো পালস': প্রযুক্তির নামে প্রতারণা

তদন্ত করতে গিয়েই সামনে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—নতুন ডিজিটাল মিটারে রয়েছে ‘অটো পালস’ নামের একটি সফটওয়্যার বা ফিচার। এই ‘অটো পালস’ কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউনিট যোগ করে দেয়।

পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীর ব্যাখ্যা, “মিটারে পালস দেখেই আমরা বুঝি ইউনিট চলছে কিনা। কিন্তু এখন এমন মিটার বসানো হচ্ছে যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও পালস চলছে—অর্থাৎ ইউনিট বাড়ছে। এটা স্পষ্ট প্রতারণা।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ২০০ থেকে ১০০০ ইউনিট পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। গ্রাহক যদি এক ইউনিটও ব্যবহার না করে, তাহলেও এই মিটারে বিল উঠতে পারে হাজার টাকার বেশি।”

দুর্নীতির অভিযোগ ও নিম্নমানের মিটার কেনার অভিযোগ

এই সমস্যার মূল উৎস হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন দুর্নীতিকে। তার দাবি, “বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা অতি নিম্নমানের মিটার সস্তায় কিনে বেশি দামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকে সরবরাহ করছে। এই মিটারগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী নয়, বরং ‘অটো পালস’ এর মতো কারিগরি সমস্যা তৈরি করছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “বাজারে একই দামে আরও উন্নতমানের মিটার পাওয়া যায়। কিন্তু লুটপাটের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি থেকে নিম্নমানের মিটার কিনে জনগণের ওপর এই প্রযুক্তিগত জুলুম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

মাসে ৮০-৯০ হাজার মিটারে সমস্যা, গ্রাহক অসহায়

এই কর্মীর মতে, “প্রায় প্রতিটি সমিতিতে প্রতি মাসে ৮০-৯০ হাজার মিটারে এই ‘অটো পালস’ সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সারাদেশে লাখ লাখ গ্রাহক প্রতিমাসে ভুল হিসাবের বিল গুনতে বাধ্য হচ্ছেন।”

সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো—এই বিল পরিশোধ করাও গ্রাহকদের জন্য বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, “গ্রাহক যদি বলে যে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেননি, তাও সিস্টেমে যা উঠেছে তাই দিতে হবে—এই যুক্তি দেখিয়ে তাদের বিল পরিশোধে বাধ্য করা হচ্ছে।”

সাধারণ জনগণ জিম্মি, দায় নিচ্ছে না কেউ

এই অস্বচ্ছ ও প্রতারণামূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসন ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চুপ। অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছে না, কারণ সিস্টেমে রিডিং উঠেছে বলেই সেটিই চূড়ান্ত ধরা হচ্ছে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এই ভোগান্তি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি