দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। টানা বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট এই মহাবিপর্যয় হাজার হাজার মানুষকে ভিটেমাটিছাড়া করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থাকে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। পরিস্থিতি এমন এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে যে, উদ্ধার অভিযান চলার সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসের জেরে এই সপ্তাহে ১৭৪ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার (বিএনপিবি) প্রধান সুহারিয়ান্তো জানান, শুধু উত্তর সুমাত্রা প্রদেশেই ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনো ৪২ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পশ্চিম সুমাত্রা ও আচেহ প্রদেশেও যথাক্রমে ২৩ ও ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বিশেষ করে, সুমাত্রার পাদাং পারিয়ামান অঞ্চল প্রায় এক মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
উত্তর সুমাত্রার বাটাং তোরু শহরে শুক্রবার সাতটি বেওয়ারিশ লাশ গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে, যা পরিস্থিতি ভয়াবহতার ইঙ্গিত দেয়। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মুখপাত্র আব্দুল মুহারি জানিয়েছেন, দ্বীপের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার এবং ভূমিধসের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীদের বিমানযোগে পাঠানো অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫। সরকারি মুখপাত্র সিরিপং আংকাসাকুলকিয়াত নিশ্চিত করেছেন, এর মধ্যে শুধু সংখলা প্রদেশেই ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বন্যার জলস্তর কিছুটা কমতে শুরু করায় উদ্ধার কার্যক্রম বর্তমানে জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা সপ্তাহখানেক ধরে পানিতে তলিয়ে থাকা আবাসিক ভবনগুলোতে প্রবেশ করে নতুন করে বহু মৃতদেহ পাচ্ছেন, যে কারণে হঠাৎ করেই হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। যদিও থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদপ্তর দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমার খবর দিয়েছে, তবে কিছু এলাকায় এখনো বজ্রঝড়ের সতর্কতা জারি রয়েছে।
প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি উভয় দেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।



















