সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ৫ নম্বর খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, লালপুর, মহদিপুর, পূর্ব নারায়ণপুর এবং ৬ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, গণিপুর, পলিপাড়াসহ ১০ গ্রামের প্রায় দেড় হাজার বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধান রক্ষায় চড়া দামে মজুরি দিয়ে কোমর পানির নিচে তলিয়ে থাকা জমির ধান সংগ্রহ করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, পানিতে তলিয়ে থাকা জমির পরিমাণ প্রায় ৩০০ বিঘা। ইতোমধ্যে ডুবে থাকা ক্ষেতের ধান অনেকটাই পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মূলত ২০২০ সালে দেওয়া অপরিকল্পিত একটি ড্রেনের (ক্যানেল) কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
জানা যায়, ওই এলাকায় ভুক্তভোগী কৃষকদের আন্দোলন সংগ্রামের পর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে এবং এলজিইডি এর ব্যবস্থাপনায় একটি ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার দৌলতপুর বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল (ড্রেন) নির্মাণ করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার ক্যানেলটি সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ২০৬ মিটার দীর্ঘ ক্যানেলটি নির্মাণে ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ব্যয় হয়। তবে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতার জন্য ক্যানেলটি ভুক্তভোগী কৃষকদের সুফল বয়ে আনেনি। বরং জমি থেকে ক্যানেলটি অন্তত দেড় থেকে দুই ফুট উঁচুতে নির্মাণ করায় আগের চেয়েও জলাবদ্ধতা বেড়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে কমবেশি বছরজুড়েই ওই জমিতে চাষাবাদ বন্ধ থাকছে।
এবার ঝুঁকি নিয়ে বোরো আবাদ করলেও ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে গেছে স্থানীয় কৃষক আইয়ুব আলীর চার বিঘা, মোস্তাফিজুর রহমানের ৩২ বিঘা, মো. বাবুর ১৮ বিঘা, জয়নাল আবেদিনের ৬ বিঘাসহ প্রায় ২০০ কৃষকের ধানক্ষেত। ভুক্তভোগীরা বলেন, ধান কাটার আগ মুহূর্তে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে কোমর পানির নিচে ডুবে যাওয়া ধান বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে কাটতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষক মতিবুল রহমান, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, বাচ্চু মিয়া ও বেলাল হোসেন বলেন, আগে এসব জমিতে চাষাবাদ হলেও স্থানীয়রা অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বন্ধ হয়ে যায় জমির পানি নিষ্কাশনের পথ। ফলে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় দেড় হাজার বিঘা আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়ে। সমস্যা নিরসনে ২০২০ সালে ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি, উল্টো সরকারের অর্ধকোটি টাকা গচ্ছা গেছে। ক্যানেল তৈরি করা হলেও তা সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়নি। ওই ক্যানেল দিয়ে পানি প্রবাহের পরিবর্তে জমিতে আরও বেশি জলাদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন চাষাবাদ করা যাচ্ছে না, জমি বিক্রিও করা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন,‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে ওই জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সমস্যার জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক বছর আগে ওই জমিতে একটি ক্যানেল নির্মাণ করা হলেও ক্যানেলে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, কৃষকদের সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।