close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভুয়া দুদকে বিব্রত দুদক

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দুদকের পরিচয় ভাঙিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়ঙ্কর প্রতারণা! ভুক্তভোগী চিকিৎসক থেকে শুরু করে করপোরেট কর্মকর্তা—বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।..

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নাম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে ভয়াবহ প্রতারণা করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ডিজি বা ডিডি সেজে ভয়ভীতি, হুমকি ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

ঘটনার সূত্রপাত একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভয়েস রেকর্ড ও বিস্তারিত তথ্যসহ একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন—“দুদকের ক্লিয়ারেন্স নিতে চিকিৎসক ডা. মাহমুদা মিতুর কাছে ১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার ও ডিডি পরিচয়ে।”

তিনি আরও লিখেন, আপনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলেও দুদকের ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিতে টাকা দিতে হবে। ক্লিয়ারেন্সের ‘রেট’ নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পোস্টটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং ঘটনাটির গভীরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক নিজেই।

ঘটনাটি আমলে নিয়ে দুদক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় শনিবার রাতে রাজধানীসহ চার জেলায় অভিযান চালিয়ে চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:

  • মো. সেলিম (পিরোজপুর)

  • মো. তরিকুল ইসলাম (বাগেরহাট)

  • মো. আতিক (ঢাকার মুগদা)

  • মো. আব্দুল হাই সোহাগ (নোয়াখালী সেনবাগ)

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক মোবাইল ফোন, ১৩টি সিমকার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ব্যাংক চেকসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত।

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানান, “এই চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া পরিচয়ে ফোন দিয়ে ‘দুদক অফিসার’ হিসেবে পরিচয় দেয়। একাধিক জিডি ও অভিযোগ পেয়ে আমরা অনুসন্ধানে নামি। ফলাফল দেখে আমরা হতবাক।”

দুদকের রাডারে থাকা ডা. মাহমুদা মিতু জানান, “একাধিকবার আমার কাছে ফোন করে বলা হয়, আপনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তবে ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিতে হলে টাকা দিতে হবে। আমি রাজি না হলে বলা হয়, খবর করে ছাড়ব।”

ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। রেড ক্রিসেন্টে কর্মরত এই কর্মকর্তা আরও জানান, “আমি নিজেই এনফোর্সমেন্ট অভিযানে নাম শুনে ভয় পেয়ে যাই। পরে বুঝতে পারি, পুরোটা সাজানো প্রতারণা।”

প্রতারণার ধরণ ও নম্বর একই হওয়ায় সহজেই বোঝা যায়, এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্র।
গুলশান থানায় করা জিডিতে উদয় আহমেদ সবুজ নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রতারক চক্র তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
রমনা থানায় করা আরেক জিডিতে মো. তাজুল ইসলাম জানান, দুদকের ডিজির পিএস পরিচয়ে ফোন দিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। ফোন নম্বর সবক্ষেত্রেই ছিল একই—০১৯২২-০০০৪৭৩

ঘটনার ব্যাপারে দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা বারবার মিডিয়ায় সতর্ক করেছি, আবার করছি—দুদকের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই চক্রের প্রতারণার ধরন এক—ভুয়া ভয় তৈরি করে টাকা আদায়। তারা অত্যন্ত স্মার্ট, পেশাদার প্রতারক।”

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে অনুরোধ করে বলেন, “যে কোনো তথ্য প্রচারের আগে ভেরিফাই করে নিতে হবে। যাচাই না করে প্রচারিত খবর আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

দুদকের আরেক মহাপরিচালক বলেন, “এই ঘটনায় আমাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। যদি কেউ ভেতর থেকে জড়িত থাকে, কঠোর ব্যবস্থা হোক। না থাকলে যারা তথ্য বিকৃত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা হোক।”

এই ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে—আরও কত মানুষ এমন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন, যারা ভয়, লজ্জা বা অসচেতনতার কারণে মুখ খুলছেন না?
দুদকের আশ্বাস—সবার অভিযোগ গুরুত্বসহকারে নেয়া হবে।
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এখন সময় সচেতনতা, তদন্ত এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থার।

لم يتم العثور على تعليقات