ভোলায় সরকারি চাল পাচারের সময় ১০০ বস্তা চালসহ আটক নসিমন চালক — কাবিখা প্রকল্পের চাল ছিল লক্ষ্য!
ভোলার দৌলতখান উপজেলায় সরকারি খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের চাল পাচারের সময় ১০০ বস্তা চালসহ হৃদয় নামের এক নসিমনচালককে আটক করেছে পুলিশ। ধরা পড়া চালক ভোলা সদর উপজেলার বাসিন্দা। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সরকারি চিহ্নযুক্ত বস্তা বদলে সাধারণ বস্তায় চাল ভরে অন্যত্র পাচার করা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, বর্তমানে জব্দকৃত চাল পুলিশ হেফাজতে রয়েছে এবং ঘটনাটি ঘিরে চলছে গভীর তদন্ত।
ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, “গতকাল বুধবার (২৫ জুন) রাতের দিকে দৌলতখান থেকে একটি নসিমনে করে বিপুল পরিমাণ চাল ভোলা সদর উপজেলায় পাচার করা হচ্ছিল। বাংলাবাজার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে সন্দেহজনকভাবে গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তখন চালক হৃদয়কে আটক করা হয় এবং সঙ্গে থাকা প্রায় ১০০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।”
জব্দ করা চালগুলো সাধারণ বস্তায় ভরা থাকলেও তদন্তে জানা গেছে, এগুলো সরকারি খাদ্য গুদামের চাল। বস্তা পাল্টে সাধারণ চাল হিসেবে অন্যত্র পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল।
দৌলতখান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শুভাশ চন্দ্র পাল জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, চালগুলো উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত চাল। প্রকল্প অনুযায়ী, ৯ টন চাল বরাদ্দ ছিল এবং নিয়ম অনুসারে তা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভেতরেই কাজের বিনিময়ে বিতরণ করা উচিত। অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের অনুমতি নেই।
ওসি বলেন, “চাল পাচারের সময় কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি চালক। চালগুলো প্রকল্পের হোক বা না হোক, প্রক্রিয়া অনুযায়ী তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি বৈধ কাগজপত্র দেখানো সম্ভব হয়, তাহলে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। অন্যথায় নিয়মিত মামলা হবে।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়তি রাণী কৈরী বলেন, “এই চাল পাচার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বড় ধরনের সিন্ডিকেটের অংশ হতে পারে। পুলিশ তদন্ত করছে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি প্রকল্পের চাল নিয়ে এমন দুর্নীতি বারবার প্রশ্ন তোলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির ওপর। সাধারণ মানুষ যখন সরকারের দেওয়া খাদ্য নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল, তখন এই ধরনের অপরাধ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল পাচার রোধে কঠোর নজরদারি ও দায়ীদের শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হলেও—স্থানীয়রা চাইছেন, এই ঘটনা যেন না ধামাচাপা পড়ে যায়।